একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়ে ১০ বছরের মধ্যে বিপর্যস্ত একটি রাজনৈতিক দলকে দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম সেনানীর ভূমিকায় বেগম জিয়াকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিলো, করতে হয়েছিলো কারাবরণ। ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ কে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ৯১ এর নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার সুনিপুণ নেতৃত্বে বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সেই সাথে বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার সূচনা হয় এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোন। এরপর আরো দুইবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোন বেগম খালেদা জিয়া।
দল হিসেবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য স্বৈরাচার এরশাদের দমন, নিপীড়ন ও বিভাজনের নীতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেন। এরপর ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিতর্কিত মঈনুদ্দিন-ফকরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। উনার বড় ছেলে জনাব তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এক প্রকার পঙ্গু করে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দেশত্যাগে বাধ্য করাতে পারেনি তার আপোষহীন মনোভাবের কারণে। ফলে তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকারের মাইনাস টু ফর্মুলা সফল হয়নি। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে মুক্ত হন তিনি।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন আমলের ১৭ বছরে তিনি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন। সেনানিবাসের বাসা থেকে অপমানজনকভাবে তাকে বের করে দেওয়া হয়। উনার ছোট ছেলে জনাব আরাফাত রহমান কোকো মারা যান। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গুলশানের বাসায় তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি তার গুলশানের কার্যালয়ের দুই পাশে বালু বোঝাই ট্রাক রেখে তাকে বন্দী করা হয়। সরকারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা নেয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়। ৮ ফেব্রুয়ারির রায়ের পর থেকেই বেগম জিয়া নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে নির্জন কারাবাস ভোগ করেছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণ গ্রেফতার, শত হামালা-মামলা দেওয়া হয়। এরপরেও বিএনপি নির্বাচনে আসেনি শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন মনোভাব ও জনাব তারেক রহমানের দূরদর্শীতার কারণে।
দীর্ঘ ৪০ বছরে বিভিন্ন উত্থান-পতন, সফলতা-ব্যর্থতা আর বিভিন্ন সময় দীর্ঘ নির্যাতনের পরও বেগম খালেদা জিয়া এই বয়সে এখনো দৃঢ়চিত্তে অটল রয়েছেন। এজন্যই তিনি আপোষহীন নেত্রী। আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই বাংলার গণমানুষের হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
গত জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টের জেল থেকে উনি মুক্তি পেয়েছেন। বিভিন্ন রোগ এবং বার্ধক্যে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়া আজ উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন। আল্লাহ পাক উনাকে সুস্থতা দান করে দেশে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন আমীন।মহসিন সিকদার, সহকারী অধ্যাপক, গণিত, ইমপেরিয়াল কলেজ, নরসিংদী।