প্রদর্শণীর শেষ দিনও সাতক্ষীরায় হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফ দেখতে উপচে পড়া ভিড়

ইসলাম প্রচ্ছদ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফের দুইদিনব্যাপি প্রদর্শণীর শেষ দিনেও উপচে পড়া ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পুরুষ-নারী, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ হাতে লেখা মহাগ্রন্থ আল কোরআন কাছ থেকে দেখেন। শুধু সাতক্ষীরা নয় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার হাজারো মুসলিম গাড়ী ভাড়া করে এসে ভিড় জমিয়েছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহরতলীর মেহেদীবাগের “মাসজিদে কুবা’য়” সমাপনী অনুষ্ঠানে মসজিদে কুবা পরিচালনা কমিটির সভাপতি দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লেখক হাবিবুর রহমান, ফিফার রেফারী তৈয়ব হাসান সামছুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সমাজসেবক আবুল কালাম বাবলা, মসজিদে কুবা’র ইমাম মুফতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। মোনাজাত পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ।
হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল এলাকায় মো. আজিজুর রহমান ও ফিরোজা পারভীন দম্পত্তির সন্তান।
হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কখনও মাদ্রাসায় পড়িনি। ২০০৩সালে সাতক্ষীরা শহরের পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ২০০৫ সালে এইচএসসি ও পরবর্তিতে এলএলবি সম্পন্ন করেছি। ২০১৩ সালের দিকে সাতক্ষীরা শহরের সমাজ সেবা অফিসে কম্পিউটার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে ব্যবসা করছি। সমাজ সেবা অফিসে কাজ করার সময় থেকে সমাজের অসহায় অবহেলিত গরীব মানুষের দূরবস্থা দেখে তাদের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবার জন্য কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে। তখন থেকে আমি চিন্তা করি এমন কিছু করবো যেটি বিশ্ব রেকর্ড করবো। সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন হাতে লেখার বুদ্ধি। ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি কোরান শরীফ হাতে লেখা শুরু করে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ করি।
তিনি আরও বলেন, এ কুরআন শরিফের দৈর্ঘ্য ৩৩৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ২৬৪ সেন্টিমিটার, ওজন ৪০৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ ৬ বছর ৮ মাস ২৩ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৪২ পাতার কুরআন শরীফ হাতে লিখেছি। লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙের চারটি কলাম শোভা বাড়িয়েছে ঐশী বাণীর। এতে ৩৪০৮টি আর্ট পেপার ও ৬৬০টি কলম ব্যবহার করেছি। এছাড়া এক পাতা লেখা হলেও অন্যপাতা ফাকা রাখা হয়েছে। মার্জিন জিডাইনে আল্লাহর নাম লেখা হয়েছে। সেখানে সর্বমোট ৩ লাখ ৫০ হাজার বার আল্লাহর নাম লেখা হয়েছে।
ইউটিউব দেখে তিনি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন বলে জানান। ৬টি কুরআন শরীফ দেখে তিনি এটি লিখেছেন। এটি লেখার পর তিনজন হাফেজ এবং একজন মাওলানা দিয়ে পুরো কুরআন শরীফ পড়ানো হয়েছে। তারা বলেছেন কোন সমস্যা নেই।
হাতে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফ কিভাবে দাবী করছেন এমন, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দুবাই এক্সপোতে ২০২০বড় একটি কুরআন শরীফ প্রদর্শিত হয়েছিলো। সেটার দৈর্ঘ ছিলো ২৫৯ সেন্টিমিটার (৮. ৫ ফুট) ও প্রস্থ ছিল ১৯৮ সেন্টিমিটার (৬.৫ ফুট) এবং আমার লেখা ১৪২টি পাতা কুরআনের ৩৩৫ সেন্টিমিটার (১০ ফুট) দৈর্ঘ্য ও ২৬৪ সেন্টিমিটার (৮ ফুট) প্রস্থ। সে কারণেই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কুরআন শরীফ বলে দাবী করছি।
তিনি আরও বলেন, মাসজিদে কুবায় দুই দিনের প্রদর্শনীতে যেভাবে মানুষের সাড়া পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
মানুব সেবার জন্য হাসপাতাল তৈরিতে তিনি প্রায় সাত বছর আগে ইউটিউব দেখে এ উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্বের কোন সহৃদয়বান আমার এ কুরান শরীফ সংগ্রহ করলে সেই অর্থ দিয়ে হাসপাতাল তৈরী করবো।
খুলনার টুটপাড়া থেকে পরিবারসহ হাতে লেখা কুরআন শরীফ দেখতে আসেন আবু রায়হান নামে একজন। তিনি বলেন, আমি এক মাধ্যমে জানতে পেরে, এই কুরআন শরীফ দেখতে আসলাম। আল্লাহ পাকের কালাম মহাগ্রন্থ আল কোরআন কাছ থেকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। যতটুকু জেনেছি, হাতে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুরআন শরীফ।
মাসজিদে কুবার ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরিফ কয়েক পারা পড়ে নির্ভুল পেয়েছি। আমাদের মসজিদের প্রদর্শনীর প্রথম দিনে কয়েক হাজার নারী পুরষ এটি দেখেছেন। এটি দেখে সবাই অভিভূত। ৩০ পারার ঝকঝকে হরফে লেখা ১১৪টি সূরা’র এই কোরআন দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ছাপা নাকি হাতে লেখা। হাবিবুর রহমান যে উদ্দেশ্য নিয়ে লিখেছেন, তার উদ্দেশ্যে পুরণ হোক এই দোয়া করি। বিশ্বের কোন সংস্থা এটিকে তাদের সংগ্রহে রাখুক এই প্রত্যাশা করি। দুই দিনে কয়েক হাজার মানুষ এটি পরিদর্শন করেছে।
সাবেক ফিফার রেফারী ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত তৈয়ব হাসান সামছুজ্জামান বাবু বলেন, সাতক্ষীরার হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরীফটি শনিবার আজ সকাল থেকে মাসজিদে কুবায় প্রদর্শণী শুরু হয়। দুই দিনে পুরুষ-নারীসহ কয়েক হাজার মানুষ এটি দেখতে এসেছেন। বিশেষ করে নারীরা এটি দেখতে আসছেন। নারীদের জন্য আলাদা করে পর্দার মধ্যে থেকে দেখানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, হাবিবুর রহমানের হাতে লেখা কুরআন শরীফ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিনা সেটা বলা না গেলেও, এটি অনেক বড় কুরআন শরিফ সেটাতো বলা যায়। এটি আসলেও বিশ্বের বড় কুরআন কিনা ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেটা পরীক্ষা-নিরক্ষা করা হবে। এটি করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য করা হবে। পরে হাবিবুর রহমানকে মাসজিদে কুবার পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা শহরতলীর মেহেদীবাগের “মাসজিদে কুবা’য়” এ প্রদর্শণীর উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম।

আসাদুজ্জামান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *