যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশিসহ সব বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরতে হবে

আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গন

বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা। দেশটির যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। অর্থাৎ তারা আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন না। নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে অনলাইনে ক্লাস করে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছে। খবর সিএনএন ও বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে দেশটিতে থাকা লাখ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, বিপাকে পড়তে পারেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও। তবে এ সিদ্ধান্তে কত শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। তাদের বেশির ভাগকেই সম্পূর্ণ টিউশন ফি দিতে হয়। এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের অন্যতম উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

করোনা মহামারির মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষে সব কোর্সের নির্দেশনা অনলাইনে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ডের এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। এর ফলে হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনলাইনেই বসন্ত ও গ্রীষ্ফ্মকালীন সেশনের সব কোর্স করার অনুমতি দিয়েছিল আইসিই পরিচালিত স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম। কিন্তু শরৎকালীন সেশনে আর এ সুযোগ থাকছে না। মেক্সিকো থেকে পড়তে হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের শিক্ষার্থী ভ্যালেরিয়া মেন্ডিওলা জানান, আইসিইর সিদ্ধান্ত শোনার পর থেকেই তিনি ভীষণ চিন্তিত এবং হতাশ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই দেশে ফিরে যাওয়া সহজ হবে না।

সোমবার এক বিবৃতিতে আইসিই জানায়, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেবে, সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দেওয়া হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ভিসা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। অর্থাৎ নতুন নিয়ম না মানলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জোর করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা বলেছে, নতুন এ নিয়ম মূলত এফ-১ ও এম-১ ভিসাধারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘এফ’ ক্যাটাগরির তিন লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৯টি এবং ‘এম’ ক্যাটাগরির ৯ হাজার ৫১৮টি ভিসা দিয়েছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির প্রায় এক হাজার ৮০০ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন আমেরিকান কাউন্সিল অব এডুকেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন একটি সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, যাতে কোনো সমাধান মিলবে না; বরং বিভ্রান্তি এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে, আতঙ্ক ছড়াবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাই ট্রাম্প সরকারকে ধীরেসুস্থে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সরকারের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ল্যারি বাকাউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *