নিখাদ বার্তাকক্ষ: আজ শনিবার (২১ মে) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগে ন্যাসভ্যাকের নতুন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়ালটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগীতার আশ্বাস দেন। তিনি এমন বিশ্বমানের গবেষকদের প্রশংসা করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনায় নেতৃত্ব দিবে। অনুষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটির প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ট্রায়ালটি সম্বন্ধে সবাইকে অবহিত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ন্যাসভ্যাকের অন্যতম উদ্ভাবক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম (ডিউ), বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব এবং ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হেলার উদ্দীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রহীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আইয়ুব আল মামুন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম ওষুধ ন্যাসভ্যাক যা বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আশা করা যায় শীঘ্রই বাংলাদেশের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীরা ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করে সুফল পাবেন। এরই মধ্যে অবশ্য কিউবাসহ বিশ্বের একাধিক দেশে ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাপানের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানী হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের উপর ন্যাসভ্যাকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এবং এরই মধ্যে এর সুফলও পাওয়া যেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীলের) নেতৃত্বে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ-১,২ এবং ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তী সময় হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল প্লস ওয়ানের মত খ্যাতিসম্পন্ন আর্ন্তজাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি প্যাথোজেন্স এবং ভ্যাকসিন্স নামক দুটি শীর্ষ বৈজ্ঞানিক জার্নালে ন্যাসভ্যাকের ২ এবং ৩ বছরের ফলোআপ ডাটাও প্রকাশিত হয়েছে। এ সমস্ত তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে ন্যাসভ্যাক অন্যতম কার্যকর ওষুধ। তাছাড়া এটি একটি ইমিউন থেরাপি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও লিভার রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। ন্যাসভ্যাকই পৃথিবীর প্রথম ইমিউন থেরাপি যা হেপাটাইটিস বি তথা যে কোন ক্রনিক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে প্রথমবারের মত একটি ফেইজ ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমানিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ন্যাসভ্যাকই ক্রনিক ইনফেকশনরে বিরুদ্ধে কার্যকর পৃথিবীর প্রথম ইনিউন থেরাপি যা দুই এবং তিন বছরের ফলোআপেও নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমানিত হয়েছে। উল্লেখ্য ন্যাসভ্যাক ভারত এবং চীনের মত দেশকে ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে নিজ দেশে নিজস্ব উদ্ভাবিত ওষুধ অনুমোদনের অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগে ন্যাসভ্যাকের যে নতুন ট্রায়লটি শুরু হতে যাচ্ছে তাতে প্রধান গবেষক হিসেবে থাকছেন অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) আর ট্রায়ালটির এডভাইজার হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। অতীতে যে সমস্ত রোগী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের এন্টিভাইরাল ওষুধ গ্রহন করেছেন তাদের উপর ন্যাসভ্যাকের কার্যকারিতা যাচাই করার পাশাপাশি তাদের আরো কার্যকর চিকিৎসার আওতায় আনার জন্যই এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটির উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ন্যাসভ্যাক নিয়ে গবেষনার জন্য ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর ও অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ২০১৯ সালে যৌথভাবে কিউবান একাডেমি অব সাইসেন্স কর্তৃক দেশটির সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক সন্মাননা ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ পদক অর্জন করেন আর ২০২১-এ বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইসেন্স অধ্যাপক স্বপ্নীলকে ‘বাস গোল্ড মেডেল’এওয়ার্ড প্রদান করেছে।