বাসস: রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের গবেষক একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘মহাকালের মহামানব’ হিসেবে অভিহিত করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শাহনওয়াজ মান্টু লিখেছেন, ভবিষ্যত তাঁকে ‘মহাকালের মহামানব’ হিসেবে ডাকবে এবং তিনি উজ্জ্বল তারকা হয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
রাজনৈতিক অধ্যয়নের তরুণ গবেষক অধ্যাপক শাহনওয়াজ বলেন, বাংলাদেশ একদিনে বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি। বহু শতাব্দী ধরে এটি বাংলার বীরদের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের একটি ধারণা এবং আদর্শ হিসাবে বিদ্যমান ছিল, যা তারা তাদের কবর পর্যন্ত বহন করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, যিনি এই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই স্বপ্নকে একটি শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী আবেগে লালন-পালন করেছেন এবং এই আবেগকে একটি আকৃতি দিয়েছেন অর্থাৎ বাংলাদেশের মানচিত্র, যা, তার হৃদয়ে খোদাই করা ছিল।
বাংলাদেশের জাতির পিতা সম্পর্কে শাহনাওয়াজের পড়াশোনা স্পষ্টতই তাকে তাঁর মহান ভক্তে পরিণত করে এবং বঙ্গবন্ধুকে ‘মহাকাব্যের মূল রূপকার এবং তিনি ইতিহাস’ হিসাবে বর্ণনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
(এবং) এই ইতিহাস হাজার বছর অতীত থেকে এসেছে এবং সে কারণেই সমসাময়িক ইতিহাস তাকে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভবিষ্যৎ বঙ্গবন্ধুকে ‘মহাকালের মহামানব’ হিসাবে অভিহিত করবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করার সময় তিনি এ কথা বলেন ।
একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে শাহনাওয়াজ লিখেছেন, ‘তিনি বাঙালি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন এবং তার স্বপ্ন একটি জাতির অস্তিত্বের ভিত্তি’। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, মানুষ মাত্রই ভ্রমপ্রবণ বা ভুল করতে পারে যা ‘শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি করা হয়েছে।’
তরুণ এই শিক্ষাবিদ তার বিশ্লেষণে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, যদিও হৃদয়ের দিক থেকে বঙ্গবন্ধু সরল, শান্ত স্নায়ু এবং সবল মনের অধিকারী ছিলেন’ যা তার মাঝে দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি করে, যে নেতৃত্ব লাখ লাখ লোককে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে পড়াশুনা করে কয়েকবছর আগে শাহনওয়াজ তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লিখেছেন, গায়ের রঙ একই হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে লম্বা এবং তার কন্ঠস্বর ছিল প্রাণবন্ত।
কিন্তু শাহনওয়াজ অন্য অনেক শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকদের মতো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, কোন বিশেষ শক্তি তাকে দিয়েছে সেই চৌম্বকীয় গুণাবলী যার কারণে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল সাড়ে সাত কোটি জনতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিদেশে পড়াশুনা করেননি কিংবা সোনার চামচ মুখে নিয়েও জন্মাননি। অথচ তিনি শিক্ষিত বাংলাদেশী থেকে শুরু করে অশিক্ষিত, আধা শিক্ষিত সকলের কাছে ছিলেন সমান প্রিয়। তিনি বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শ্রমজীবী সকলকে উজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন।
শাহনওয়াজ উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু রাতারাতি নেতৃত্বের চূড়ায় পৌঁছাননি বরং তার উত্থানটি ছিল ধীর ও স্থির প্রক্রিয়ার। তিনি একজন ন¤্র কর্মী হিসেবে একেবারে নিচু ধাপ থেকে শুরু করে শ্রমসাধ্য চেষ্টায় জাতীয় নেতার পদে আরোহন এবং জাতির পিতা হিসেবে শিখর স্পর্শ করেছেন।
এই বিশ্লেষক তার গবেষণা পত্রে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে অত্যন্ত সম্মানিত রাষ্ট্রনায়ক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট বিদেশীদের এক ডজন বইপত্র ও রেফারেন্স তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর চরিত্রটি ছিল কোমলে কঠোরে মেশানো, যার ছিল যাদুকরী আকর্ষণীয় ক্ষমতা।
শাহনওয়াজ বঙ্গবন্ধুকে দেখেন শিশুর মতো সরল, যিনি অনমনীয় সাহসী আবার প্রয়োজনে ইস্পাতের মতো কঠোর। আর এসবের সাথে যোগ হয়েছিল তার মনের অভাবনীয় শক্তি এবং আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা।
তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু চরিত্রগতভাবে জাতীয়তাবাদী, আচরণগতভাবে গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসে সমাজতান্ত্রিক এবং প্রত্যয়গতভাবে অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনি নিছকই একজন ব্যক্তি নন, মূলত তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন, একটি বিপ্লব এবং একটি উত্থান।
শাহনওয়াজ বলেন, কিন্তু এক সন্ধিক্ষণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী বঙ্গবন্ধুর জীবন থামিয়ে দেয় এবং জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাসের খুবই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান ঘটায়।
তিনি উল্লেখ করেন, কিন্তু খুনিরা মহান নেতার চমৎকার উত্তরাধিকার-পুনরুজ্জীবিত বাঙালি জাতিকে শেষ করতে পারেনি। তিনি বাঙালি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন আর তার স্বপ্নগুলো হয়ে উঠেছে একটি জাতির অস্তিত্বের ভিত্তি।