গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে টর্চারসেল নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আলোচিত টর্চার সেল থেকে ৩ যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। দলবলসহ পালিয়ে গেছে যুবলীগ নেত্রী। তিন লাখ টাকার মুক্তিপণের দাবীতে টর্চার সেলে ৮দিন আটকে রেখে ওই ৩ যুবকের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলছিল। তাদেরকে যুবলীগ নেত্রীর আস্তানা থেকে উদ্ধারের পর থানায় মামলা হয়েছে। যুবলীগ নেত্রীর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
টঙ্গী পূর্ব থানা সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী পূর্ব থানা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা পদপ্রার্থী শিল্পী আক্তারের বাসায় প্রায় চার মাস আগে স্বর্ণ চুরি হয় এমন অভিযোগে গত ২ জুলাই জালাল (৩৫), খোকন (৩৫) ও রনি (২৬) নামের ৩ নিরীহ যুবককে তাদের টঙ্গীর আরিচপুরের বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় শিল্পীর সন্ত্রাসী বাহিনী।
প্রথমে তাদেরকে শিল্পীর সহযোগী কথিত সাংবাদিক শাওন সরকারের স্থানীয় বউ বাজারস্থ গোপন আস্তানায় নিয়ে রাখা হয়। সেখানে এক দিন আটক রেখে বেধড়ক পিটিয়ে তাদের সাথে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল লুটে নেয় অপহরণকারীরা। পরে অপহৃত জালালের বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আরো ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। কিন্তু তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে এক দিন পর শিল্পীর গোপন টর্চার সেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিয়ে অপহৃত তিন জনের পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবী করা হয় এবং মুক্তিপণের টাকার জন্য অপহৃতদের বৈদ্যুতি শক দেয়াসহ অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। বিষয়টি আইন শৃংখলা বাহিনীকে জানালে তাদের হত্যা করে লাশ স্বজনদের উপহার দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে নিরুপায় স্বজনরা অবশেষে টঙ্গী পূর্ব থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে যুবলীগ নেত্রীর তিনটি বাড়িতে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে যুবলীগ নেত্রীর স্থানীয় দত্তপাড়া লেদু মোল্লা রোডের বাড়ির টর্চার সেল থেকে অপহৃত তিন যুবককে উদ্ধার করে। এসময় অপহরণকারী চক্রের সদস্য শিল্পীর সহযোগী মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিল্পী আক্তার ও শাওন সরকারসহ তার অপরাপর সহযোগীরা পালিয়ে যায় বলে পুলিশ জানায়।
এ ঘটনায় অপহৃত খোকনের স্ত্রী নিলুফা বেগম বাদী হয়ে শুক্রবার টঙ্গী পূর্ব থানায় অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা (নং-১৮) দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত মুন্নাকে আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত যুবলীগ নেত্রী শিল্পীর আরো বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে।
একটি ছবিতে দেখা গেছে, শিল্পী আরো ৪ যুবতির সাথে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠেছেন। অপর একটি ছবিতে দলীয় মিছিলে শিল্পীকে হাত উঁচিয়ে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে সারাদেশে আলোচিত যুব মহিলালীগ নেত্রী পাপিয়াসহ অনেক উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সাথে বেশ সখ্যতা রয়েছে টঙ্গীর ‘পাপিয়া’ খ্যাত শিল্পি আক্তারের। এ সুবাদে যুব মহিলা লীগের নাম ভাঙিয়ে নিরীহ লোকদের জিম্মি ও অপহরণ করে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে শিল্পী। তার অত্যাচারে এলাকাবাসীও অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিল্পী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।