নিখাদ বার্তাকক্ষ: বেলা পৌনে ১১ টা, ক্লাসে ছিলেন প্রধান শিক্ষক। এমন সময় হাজির স্কুল সভাপতির স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া লিজা। কথা আছে বলে প্রধান শিক্ষককে ডেকে নেন অফিস কক্ষে। অফিসে আসা মাত্রই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন সভাপতির বউ।
কথার একপর্যায়ে পায়ের জুতা খুলে শিক্ষককে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করলেন। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক অফিসে আগে থেকে থাকা অন্যরা।
এমন ঘটনা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ঘটনাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে থেকেই পুরো উপজেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এর আগে, বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় ও লোকলজ্জায় মুখ খোলেননি লাঞ্ছিত হওয়া প্রধান শিক্ষক।
মারধরের শিকার হওয়া ওই শিক্ষকের নাম মো. আব্দুল গফুর সরকার। তাকে স্যান্ডেল দিয়ে পেটানো জান্নাতুল মাওয়া লিজা একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামদুদুর রহমান রিপনের স্ত্রী।
জুতাপেটা করার আগে প্রধান শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে লিজা বলেন, ‘আপনার নামে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ হতে পারে। বদলি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যান। ’
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর সরকার জানান, ক্লাস থেকে তাকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতির স্ত্রী লিজা। একই সঙ্গে তাকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে যেতেও বলেছেন। হঠাৎ এ হামলার কারণ জানেন না তিনি।
জুতাপেটার কারণ জানতে চাইলে জান্নাতুল মাওয়া লিজা বলেন, ওই ঘটনা তো বুধবারই মীমাংসা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
একই কথা বলছেন তার স্বামী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামদুদুর রহমান রিপনও। তিনি জানান, ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন ঘটনা ঘটে। তবে তা আপস করা হয়েছে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন। ঘটনার মীমাংসা তার মাধ্যমে করা হয়নি বলে জানান তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, ঘটনা জানার পর ওই দিন দুপুরেই বিদ্যালয়ে যাই। শিক্ষক কোনো ভুল করলে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া যেতো। ঘটনাটি দুঃখজনক। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলে নূর নান্নু বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতা করছেন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন। তাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করলেও কিছু হয় না। তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করা হবে।