নিখাদ বার্তাকক্ষ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি যথাযথ ও উদ্ভাবনী কর্ম পরিকল্পনা এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণ পদ্বতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু, আমি এখনো বিশ্বাস করি সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি যথাযথ উদ্ভাবনী কর্ম পরিকল্পনা ও কার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্যকর পর্যবেক্ষণ পদ্বতির মাধ্যমে এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন (জিইডি) আয়োজিত ‘এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।
সরকার প্রধান বলেন,‘আমি বিশ^াস করি, আমরা সকলে মিলে এক সঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ এর আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে এবং ২০৪১ সালের পূর্বেই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং এসডিজি অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য নীতি সহায়তা এবং তহবিল প্রদান অব্যাহত রাখব, তবে আমাদের অবশ্যই তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং অপচয় রোধ করতে হবে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পূরণ এবং তা যেন বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এসডিজিকে কেবল একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হিসেবে গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক এ লক্ষ্যমাত্রাকে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিজের উপযোগী করে প্রণয়ন করার কার্যক্রম শুরু করেছে যা এসডিজি স্থানীয়করণ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১৭ টি অভীষ্ট হতে ৩৯ টি সূচককে বাংলাদেশের জন্য ‘এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে সঙ্গে প্রতিটি জেলার বাস্তবতা বিবেচনায় ১টি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে।
জননেতা শেখ হাসিনা বলেন, আশা করা যায়, এই অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরে দ্রুত ও সফলতার সঙ্গে এসডিজি পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, এবং দেশের চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে এসডিজি বাস্তবায়ন গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে তাঁর সরকার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে এবং কাজ করে যাবে।
উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সকলের অংশগ্রহণের ওপর পুণরায় গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, লক্ষ্য অর্জনে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে সক্ষম হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ হতে সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান ও যথাযথ নীতি সহায়তা প্রদানের কারণে অর্থনীতি আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসছে। নির্দিষ্ট সময়ে এসডিজি’র পথ পরিক্রমা নিশ্চিত করা কঠিন, তবে আমি বিশ্বাস করি সঠিক ও উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা এবং কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে ‘এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স ২০২২’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিশে^র বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমাদের এটা পর্যালোচনা করা দরকার।
তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা সবথেকে গুরুত্ব দেব সেটাও নির্দিষ্ট করা দরকার এবং যেগুলো আমরা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি সেগুলোকে ধরে রাখা এবং আগামীতে আমরা কি কি বিষয় অর্জন করবো যেহেতু এখনকার প্রেক্ষিত যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ^ব্যাপীই একটা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে এবং খাদ্যাভাবও দেখা দিচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে তিনি দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুণব্যক্ত করেন এবং আমাদের যে সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলকে সাশ্রয়ী হবার আহবান জানান।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যশস্য- প্রতিটি জিনিষের ব্যবহারেই সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ, আমরা জানি কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মন্দার ধাক্কা সবখানেই দেখা দিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য দেশের প্রতিটি পরিবার এবং মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
তিনি এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধাণের ক্ষেত্রেও আশু করণীয় এবং দীর্ঘ মেয়াদি করণীয় যথাযথ ভাবে নির্ধারণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক (ভারপ্রাপ্ত) তুওমো পাউতিয়ানেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ।
জিইডি’র সদস্য (সচিব) ড. মো. কাওসার আহমেদ বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রগতি এবং এসডিজি অর্জনের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন।
অনুষ্ঠানে এসডিজি বিষয়ক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বিষয়ক একটি প্রকাশনার মোড়কও উন্মোচন করেন।