স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য কেবল হয়রানি নয়, খোদ মেশিনই গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কমপক্ষে তিনটি আলট্রাসাউন্ড মেশিন গায়েব করে গোডাউনে পুরনো মেশিন রেখে দেওয়া হয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো মেশিন পরিত্যক্ত করে রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার কাজী মো. রশিদ-উন-নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অনিয়ম হয়ে থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তিনটি আলট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়। এর মেয়াদ ছিল ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত। কেনার পর তিন বছর মেশিনগুলো অলস রেখে দেওয়া হয়। পরে পাঠানো হয় গোডাউনে। এরপর সেখান থেকে এগুলো উধাও হয়ে যায়। হাসপাতালের একটি চিহ্নিত চক্র মেশিনগুলো বিপুল অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনটি পুরনো মেশিন এনে গোডাউনে রেখে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জন্য ২০১৩ সালে স্থানীয় ওয়ার্সী সার্জিক্যাল নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় একটি জি হেলথ কেয়ার ইউএস কোম্পানির আলট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয় (মডেল নম্বর লজিক পি-৫)। এরপর ২০১৪ সালে একই কোম্পানির আরেকটি মেশিন কেনা হয় ৪২ লাখ টাকায়, যা হাসপাতালের স্টক লেজারের ৪৭ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে। একই বছর আরেকটি মেশিন জি-টু-জি পদ্ধতিতে চীন থেকে আনা হয় অনুদান হিসেবে। এর মডেল নম্বর জন কেয়ার কিউ ৩ উহান, চায়না। হাসপাতালের স্টক লেজারের ৬৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে। এ মেশিনটির দামও ৪৫ লাখ টাকা বলে জানান হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা। মেশিনগুলোর লাইফটাইম ধরা হয় ১০ বছর। কিন্তু মেশিনগুলো তিন বছর ব্যবহার ছাড়াই ফেলে রাখা হয়। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মেশিনগুলো গোডাউনে পাঠানো হয়। যা হাসপাতালের প্রধান সহকারী আবদুর রহিম ভুঁইয়া রিসিভ করেন। এরপর মেশিনগুলো রাতের আঁধারে উধাও হয়ে যায়। সাধারণ কর্মচারীদের অভিযোগ, হাসপাতালের গাড়িচালক ফরিদ আহাম্মেদ অ্যাম্বুলেন্সে করে মেশিনগুলো ৩ নভেম্বর রাত ৯টা, ১১ নভেম্বর সকাল ৮টা ও ১৪ নভেম্বর সকাল ৬টায় হাসপাতালের ২ নম্বর ভবনের নিচে পরিত্যক্ত মালামালের গোডাউনে রেখে যান। এর দৃশ্য সিসি ফুটেজে ধরা পড়ে। তবে এখন সেই ফুটেজ নষ্ট করারও অপচেষ্টা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী কোনো মেশিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার প্রয়োজন হলে ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ওয়ার্কশপের (নিমিউ) বিইআর অনুমোদন নিতে হয়। উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে পরিত্যক্ত ঘোষণার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ তিনটি মেশিনের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোনো যন্ত্রপাতি গোডাউনে রাখা অবৈধ। তার পরও রহস্য কারণে ওই মূল্যবান মেশিনগুলো পরিত্যক্ত মালামালের সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়। একটি অসাধু সিন্ডিকেট মেশিনগুলো ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। এ ছাড়া কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইকো-মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন পরিত্যক্ত বলে অন্যত্র বিক্রির পাঁয়তারা চলছে।