পদ্মা সেতুর অবশিষ্ট ২টি স্প্যানের জন্য সর্বশেষ মালামাল চীন থেকে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে দেশের চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরে প্রয়োজনীয় কাস্টমস ও শুল্ক পরিশোধের পর লাইটার জাহাজের মাধ্যমে মংলা বন্দরে পৌঁছায় সেখান থেকে আসছে মাওয়ায়। পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৯টি স্প্যান অনেক আগেই বাংলাদেশে আসে এবং এর মধ্যে ৩১টি স্প্যান পদ্মা সেতুর পিলারে বসে প্রায় পৌনে পাঁচ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে এবং ৮টি স্প্যান পিলারে বসানোর জন্য মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। অবশিষ্ট ছিল দুটি স্প্যান যার মালামাল করোনাতংককে ছাপিয়ে (বাকি ২টি স্প্যানও) দেশে পৌঁছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে ২টি স্প্যানের মালামালগুলো মাদার ভেসেল থেকে ৮টি লাইটার জাহাজে করে মাওয়া নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় ২টি স্প্যানের নোড/কর্ড ও মেম্বারগুলো মাওয়া পৌঁছতে শুরু করবে। একটি একটি করে লাইটার লোড হচ্ছে আর মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মূল সেতুর ব্যবস্থাপক দেওয়ান আব্দুল কাদের। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে সবগুলো লাইটার মাওয়া এসে পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি। স্প্যানবাহী জাহাজটি ১৩ জুন চট্টগ্রাম এর বহিঃনোঙরে আসে। এ জাহাজে মূল সেতুর মোট ১৮০টি নোড/কর্ড ও মেম্বার ছাড়াও অনেক মালামাল রয়েছে।
১০ জুন পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যান (আইডি-৫এ) পিলার ২৫-২৬ এর ওপর স্থাপন করা হয়। এতে মূল সেতুর ৪৬৫০ মিটার স্প্যান স্থাপন সম্পন্ন হয়। ৩১তম স্প্যান স্থাপনের পর মূল সেতুর ১০টি স্প্যান স্থাপন করা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় পৌঁছালেও বাকি ছিল ২টি স্প্যান। ১৩ জুন ২টি স্প্যানবাহী জাহাজ এমভি কং সিউ সং চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে পৌঁছায়।
দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের নানামুখী কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। এই সেতুর উভয় পাড়ে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজ শেষ। চলছে নদী শাসন, নদী শাসনের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্লক তৈরি, ড্রেজিংয়ের কাজসহ বিভিন্ন স্থানে স্লপিংয়ের কাজ। পদ্মা সেতুর বিশাল এই কর্মযজ্ঞ রাতের আঁধারকেও হার মানায়। ইতিমধ্যে মূল সেতুর ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ৬২৯টি (৯টি স্প্যানে-১৩৫০ মি.) এবং ২৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ১১০৫টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার টি- গার্ডার এর মধ্যে ১৫০টি স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের রেল লাইনের কাজ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ করা হবে। এরপর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬১ কিলোমিটার রেল পথ প্রশস্ত করা হবে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে মূল কাজের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে শুরু হয় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক পথ চলা। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সেতুর দুই পাড়েই সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে এটি সহায়ক হবে। এ ছাড়াও এখানে গড়ে তোলা হবে হংকং সিটির মতো শহর।