মিজানুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নতুন এমআরপি (যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট) এবং ই-পাসপোর্ট দেয়ার কার্যক্রম শিগগির চালু হচ্ছে না। করোনায় পাসপোর্ট অধিদফতরে অফিস পুরোদমে চালু না হওয়ায় লাখ লাখ গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে। এখনও নতুন করে প্রায় আড়াই লাখ আবেদন আটকে রয়েছে।
এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে এমআরপি পাসপোর্টের নবায়ন (রি-ইস্যু) ও ভিসার কাজ চলছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন, অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অফিস বন্ধ ছিল। জুন মাস থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চলছে। এ কারণেই আবেদনগুলো আটকে আছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। জানা গেছে, প্রতিদিন শতাধিক লোক আসছেন আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতরে। অফিসের সামনে এসে তারা পাসপোর্ট ডেলিভারির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। অনেকই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। অবশেষে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ দালালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। অনেকের বিদেশে ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারও কারও নতুন চাকরিতে আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য আবেদন করতেও নতুন পাসপোর্ট প্রয়োজন। তারা আবেদন করে ঘুরছেন মাসের পর মাস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দুই ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে বা হয়ে যাচ্ছে তাদের ভিসার আবেদন করার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। নতুন পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট গ্রহীতার ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিশ পিকচারসহ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলো নিয়ে গ্রহীতাকে সরাসরি অফিসে আসতে হবে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে পাসপোর্ট অধিদফতরের কার্যালয়গুলো খুললেও পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়, নতুন পাসপোর্টের আবেদন এবং বায়ো-এ্যানরোলমেন্ট বন্ধ থাকবে। যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ এখনও ছয় মাসের বেশি রয়েছে তাদের পাসপোর্ট রিনিউ/রি-ইস্যু আপাতত বন্ধ থাকবে। নূর আহমেদ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছর ১৩ নভেম্বর পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট-ছবিসহ বায়ো-এ্যানরোলমেন্ট করে আসি। মেসেজে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে দীর্ঘদিন ধরে ‘পেন্ডিং ফর পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন’ লেখা দেখাচ্ছে। মিরপুরের ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন বলেন, গত ২৬ নভেম্বর স্ত্রী ও মায়ের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন করি। ৫-৬ বার আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিই। এখনও পর্যন্ত পাসপোর্ট হাতে পাইনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, প্রয়োজনীয় গ্রাহক সেবা দিতে পাসপোর্ট অধিদফতর প্রস্তুত। পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে প্রায় ৪০ হাত ঘুরতে হয়। এই অবস্থায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য কাজের গতি মন্থর। এখন জরুরি ভিত্তিতে কিছু পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। দিনে প্রায় সাত হাজারের মতো পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ‘রি-ইস্যু’ পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হচ্ছে।