নিউজ ডেস্ক : র্যাবের অভিযানে ভৈরব, চাঁদপুর ও পটুয়াখালী হতে রাজধানীর পল্লবীতে সন্তানের সামনে বাবাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মোঃ আউয়ালসহ ৩ আসামী গ্রেফতার।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৬ মে ২০২১ তারিখ রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন (৩৩), পিতা- মৃত জৈনুদ্দীন, পল্লবী, ঢাকা-কে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় নিহত সাহিনুদ্দীনের মাতা মোসাঃ আকলিমা রাজধানী পল্লবী থানায় ২০ জন আসামী এবং আরও ১৪-১৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪১, তারিখঃ ১৭ মে ২০২১, ধারা-৩৪২, ৩০২, ১০৯, ৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারে হত্যাকান্ডটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৃশংস হত্যাকান্ডটি ব্যাপক সমালোচিত হয়। র্যাব বর্ণিত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে গত ১৯ মে ২০২১ তারিখ রাত ১১৩০ ঘটিকায় চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হাসান (১৯), পিতা-নুরুজ্জামান, চাঁদপুর এবং ২০ মে ২০২১ তারিখ ০৩০০ ঘটিকায় ভৈরব সদর এলাকা হতে নৃশংস হত্যাকান্ডের মূলহোতা, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী এজাহারভ‚ক্ত ১নং আসামী মোঃ আউয়াল (৫০), পিতা-মৃত মোঃ রশিদ মিয়াজী, কাফরুল, ঢাকা এবং ২০ মে ২০২১ তারিখ ০৫০০ ঘটিকায় বাউফল পটুয়াখালী হতে এজাহার নামীয় ১৯ নং আসামী মোঃ জহিরুল ইসলাম বাবু (২৭), পিতা- আবদুল জব্বার মৃধা, বাউফল, পটুয়াখালী গ্রেফতার হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। ঘটনার ৪/৫ দিন পূর্বে দুপুরবেলা মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও মামলার ১নং আসামী গ্রেফতারকৃত আউয়াল এর কলাবাগান অফিসে সে, তাহের (২নং আসামী) এবং সুমন (৩ নং আসামী) হত্যাকান্ডের চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে। মাঠ পর্যায়ে হত্যাকান্ড বাস্তবায়নের জন্য সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে এবং এছাড়া সহযোগী হিসেবে আরো বেশ কয়েকজন যুক্ত ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় গত ১৫ মে ২০২১ তারিখ সুমন, বাবুসহ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন শলা পরামর্শ করে। উক্ত কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা ১৬ মে ২০২১ তারিখ বিকালে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। অতঃপর ভিকটিম সাহিন সন্তানসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। মিমাংসার অজুহাতে পূর্বেই সাহিনকে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল, এবং মুরাদসহ ১০-১২ জন এলোপাথারিভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পর্যায়ক্রমে সাহিনকে আঘাত করতে থাকে এবং শেষ পর্যায়ে শরীরের উর্ধাংশে মনির এবং হাটু ও হাত পায়ে মানিক কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। উক্ত সময়ে বাবুসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লুকআউট ম্যান হিসেবে নজরদারী করে। হত্যাকান্ডটি ৫/৭ মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। ঘটনা শেষে সুমন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ১ নং আসামী মোঃ আউয়াল’কে মোবাইলে ফোন করে জানায় “স্যার ফিনিস” এবং তাদের আরো অল্প কিছুক্ষণ কথা হয়। অতঃপর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়।
র্যাব প্রথম থেকে এই হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতারে উদ্যোগী ছিল। র্যাব-৪ ইতোমধ্যে গত ১৭ মে ২০২১ তারিখ মামলার এজাহার নামীয় ১৩ নং আসামী দিপু (২৮), পিতা-আবুল হোসেন, নাগরপুর, টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে।
গ্রেফতারকৃত মূল আসামী মোঃ আউয়াল একজন আবাসন ও জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন সন্ত্রাসী গ্রæপ দ্বারা জমিদখল ও আধিপত্য বিস্তার করত। গ্রেফতারকৃত আওয়াল হতে তারা মাস ভিত্তিক ১০/১২ হাজার টাকা মাসোয়ারা পেত এবং ক্ষেত্র বিশেষ কাজ অনুয়ায়ী অতিরিক্ত টাকা পেত। এই সন্ত্রাসী দল সুমন এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিক্সা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাত।
উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।