সুমন জাহিদ : বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদের নামে দেশে সহিংস তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এ সংগঠনের সহিংসতার মাত্রা যে কোথায় যেতে পারে তা এবার তা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব দেখেছি। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতির আলোকে সোনার বাংলা গড়ার সকল প্রচেষ্টা মলিন করে দিতে এই হেফাজত ইসলামই যথেষ্ট। তাই রাষ্ট্র, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে এই হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
সরকারের এখনই করণীয়
হরতালের নামে নাশকতাকারী সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তাদেরকে উপযুক্তভাবে কাউন্সেলিং করতে হবে। যে সকল মসজিদ থেকে মাইকে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে, স্যোসাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যারা বিদ্বেষ ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। হুকুমের আসামী ও উস্কানিদাতা হিসেবে বাবুনগরী, মামুনুল হকসহ শীর্ষ হেফাজত নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
হেফাজতের প্রয়াত প্রধান আল্লামা শফির মৃত্যু বিচারবিভাগীয় পুণঃতদন্তপূর্বক যথাপোযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে সৃষ্ট অরজকতা জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। করোনাকালে ঘরেবাইরে, মসজিদে সকল প্রকার ওয়াজ মাহফিল, জিকির, ইসলামী জলসাসহ সব প্রকার বয়ান ও অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করতে হবে।
রাষ্ট্রের করনীয়
সকল মসজিদে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। নিষ্কণ্টক জমিতে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনো মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। বিরোধপূর্ণ জায়গা, অর্পিত সম্পত্তি বা জোর করে বেইনিভাবে দখলকৃত জমিতে নির্মিত সকল মসজিদ, মাদরাসা উচ্ছেদ করতে হবে। প্রতিটি মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব যথাযোগ্য অডিট ফার্ম কর্তৃক নিরীক্ষা করাতে হবে। মসজিদ কমিটিতে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে জেলাপ্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধী, জামাত-শিবির, দুর্নীতিবাজ, কালোটাকার মালিক, ঘুষখোর-সুদখোর, সমাজবিরোধী কেউ মসজিদ কমিটিতে থাকতে পারবে না। সকল প্রকার মাদ্রাসার সোর্স অব ফান্ড জানাতে হবে। দুর্নীতি বা ঘুষের টাকায় কোনো মসজিদ-মাদরাসা নির্মিত হতে পারবে না। মাদরাসাগুলো নিয়মিত অডিট করতে হবে। শিক্ষা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যৌথ অনুমতি ব্যতীত কোনো প্রকরের মাদরাসা নির্মাণ বা পরিচালনা করা যাবে না। যেগুলো আছে সেগুলোকেও নিয়মের আওতায় আনতে হবে।
সকল মাদ্রাসা রাজনীতিমুক্ত হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মাদ্রাসার শিশুদের রাজপথে আনা যাবে না। বলৎকার রোধে নতুন আইনসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল মসজিদ ও মাদরাসার প্রতিটি কক্ষ ২৪ ঘণ্টা সার্ভেলেন্সের মধ্যে আনার জন্য পর্যাপ্ত সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে মুরুব্বিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয়দের বাইরে নতুন নতুন ইমাম-মোয়াজ্জেম নিয়োগ হচ্ছে যারা এলাকায় পরিচিত নয়। মসজিদ ও মাদরাসায় নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব ক্লিয়ারেন্সসহ সঠিক নিয়োগপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া সকলপ্রকার মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের অবজারভেশনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় সকল গ্রাম ও মফস্বল শহরে নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে ঘরোয়া মহিলা মাহফিল। এ ধরনের মাহফিল করার ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপনপূর্বক স্থানীয় থানার অনুমতি সাপেক্ষে আয়োজন করার নিয়ম করতে হবে।
আওয়ামী লীগের করণীয়
প্রতিটি অঙ্গ সংগঠন থেকে স্থানীয়ভাবে সকল পাড়ায়, মহল্লায় জামাতি-হেফাজতীদের তালিকা তৈরি করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের স্থানীয় শাখার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে মৌলবাদ বিরোধী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্যোসাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরিকালে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের যে সকল নেতা-কর্মী বিভ্রান্তি তৈরিতে সহায়তা করেছে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদী নব্য নেতাদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে যে হাজার হাজার সংগঠন গড়ে ওঠেছে তা সব বন্ধ করতে হবে। এসকল ভুঁইফোড় সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ও সংশ্লিষ্ট আওয়ামী নেতাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
লেখক: কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ