স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা বা উদ্দেশ্যে এই তাণ্ডব ও বর্বরোচিত আক্রমণের মাধ্যমে হেফাজত ইসলাম এই নাশকতা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। বুধবার ৩১ মার্চ সকালে সিএমএইচ-এ গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদেরকে দেখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন ।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, “২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে হেফাজতকর্মীরা সারা বাংলাদেশে তাণ্ডব চালায়। প্রথমে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, পরে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে কোমলমতি ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা হয়।
“হাজার হাজার ছাত্র হাটহাজারী থানা আক্রমণ করে। ওখানকার ডাক বাংলোয় আক্রমণ করে। হেফাজতকর্মীরা ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় ভূমি অফিসের সমস্ত কাগজপত্র, ল্যান্ড রেকর্ড একত্র করে তারা জ্বালিয়ে দেয়। সরকারের রেকর্ডপত্র জ্বালিয়ে দেওয়ার মানে হচ্ছে সেই অঞ্চলের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ বছরের পর বছর এ সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগবেন।”
তিনি বলেন, “একজন শিক্ষানবিশ এএসপি হাটহাজারী থানায় প্রশিক্ষণরত ছিলেন। তাকে ডাক বাংলো থেকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। একইভাবে ডিইউটিতে থাকা একজন কনস্টেবলকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক বাংলোর সামনে দায়িত্ব পালনরত একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে গুরুতর আহত করা হয়। এএসপি এবং সাব-ইন্সপেক্টরকে প্রথমে চট্টগ্রাম সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। পরে সাব-ইন্সপেক্টরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকায় সিএমএইচে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে।
“পরদিন আবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় তারা। তাদের আক্রমণে গুরুতর আহত হন ইন্সপেক্টর নুরুল আলম। তাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকা এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।”
পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর মডেল থানার দুই নম্বর শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নুরুল আলম এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার এসআই মেহেদী হাসান।
গুরুতর আহত সহকারী পুলিশ সুপার হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী বর্তমানে চট্টগ্রাম সিএমএইচে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, যারা হামলা ও নাশকতা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই হামলার নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিতর্ক এড়াতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলেও জানান আইজিপি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, মামলায় হেফাজত নেতাদের নাম দেয়া হয়নি বিষয়টি এমন নয়, যারা হামলা করেছে তাদের নামে মামলা হয়েছে। যারা নির্দেশদাতা তাদের নামও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এরপরই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় হেফাজতে ইসলামের একাধিক সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় কমপক্ষে ৩৪টি মামলায় ৩০০ চিহ্নিত ব্যক্তিসহ প্রায় ২০ হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে কোনো মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদেরকে আসামি করা হয়নি।