পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালির অর্থনৈতিক এবং ভাষা-সংস্কৃতি-শিক্ষার বিকাশের জন্য অনন্য ভূমিকার কারণে শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কাছে বঙ্গবন্ধু হিসেবে স্বীকৃত হন। পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে পরিণত করতে হবে- এ লক্ষ্য তিনি নির্ধারণ করেন পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই। এ জন্য যে কোনো দুঃখ-কষ্ট বরণে তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ১৯৫২ সালের ১৪ জুন মাত্র ৩২ বছর বয়সে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন- I have born to suffer. ততদিনে তিন দফায় প্রায় তিন বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। প্রিয়তম স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা থানা হাজতে বলে দিয়েছেন- ‘জেলে থাক আপত্তি নেই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখ।’ [সূত্র : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯১]
আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে তাঁর ওপর নিপীড়ন নতুন মাত্রায় ওঠে। ১৯৬৬ সারের ফেব্র“য়ারি মাসে স্বায়ত্তশাসনের ছয়-দফা প্রদানের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তর করে আরও ৩৪ জন বন্দীর সঙ্গে বিচার শুরু হয় পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ‘ষড়যন্ত্রে যুক্ত’ থাকার দায়ে। কিন্তু তিনি নির্ভিক, নিঃশঙ্কচিত্ত। এ মামলা চলাকালে ক্যান্টনমেন্টের বন্দিশালায় তাঁর রুমের সঙ্গী মেজর শামসুল আলম আমাকে বলেছেন- সর্বদা তিনি সাহস রাখতেন এবং অন্যদের সাহস জোগাতেন। ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সময় গান গাইতেন ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা…’। বলতেন- শেখ মুজিবকে কেউ আটকে রাখতে পারবেন না। জনগণই আমাদের সকলকে আন্দোলন করে মুক্ত করবে।
বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারির প্রবল ছাত্র-গণ আন্দোলনে তিনি মুক্ত হন, নন্দিত হন বঙ্গবন্ধু হিসেবে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বারের মত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব পকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ছিল ১৬২টি আসন, পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশে ১৩৮টি আসন। এর বাইরে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল ১৩ টি আসন- পূর্ব পাকিস্তানে ৭টি, পশ্চিম পাকিস্তানের চার প্রদেশে ৬টি। জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তান বেশি আসন পেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ ততদিনে মনস্থির করে ফেলেছে- পশ্চিম পাকিস্তানের বিগ বিজনেস ও শোষকদের সঙ্গে আর নয়। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ছয়-দফা সাঁকো, যার ওপর দিয়ে সেখানে পৌঁছানো যাবে। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জনগণের ম্যান্ডেট। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি সে ম্যান্ডেট পেয়ে যান- জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের (সাধারণ আসন ১৬২, সংরক্ষিত নারী আসন ৭) মধ্যে ১৬৭ টিতে জয়ী হয় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের আগে যে লিগ্যাল ফেমওয়ার্ক ঘোষণা করেন, তাতে বলা ছিল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান প্রণীত হবে। তবে সংবিধান চার মাসের মধ্যে প্রণয়ন করতে হবে এবং তা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। জাতীয় পরিষদে ১৬৭ আসন পাওয়ায় আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ নির্বাচনের এই গণরায় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু দুটি বিষয়ের প্রতি নজর রেখেছিলেন- বাঙালির স্বাধিকারের প্রশ্ন সামনে আনা এবং তিনি ও তাঁর দল আওয়ামী লীগই কেবল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে বিধায় এ দলটিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী করা।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি ১১ মাস সময় পেয়েছিলেন প্রচারের জন্য। ১১ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ প্রচারভিযান। আমি সে সভায় উপস্থিত ছিলাম। পল্টন ময়দান ও আশপাশের এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। আইয়ুব খানের মোসাহেব হিসেবে পরিচিত গভর্নর মোনায়েম খান বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিবকে আর পল্টন ময়দানে সভা করতে দেওয়া হবে না। আমি যতদিন গভর্নর পদে রয়েছি, তাকে জেলে পচতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন- ‘মোনায়েম খান সাহেব, আপনি ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছেন। আমি এসেছি পল্টন ময়দানে।’ তবে পল্টনে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শেষ সভা (১৯৭১ সালের ৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে তিনি উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, যেখানে স্বাধীন বাংলার ইশতেহার পাঠ করা হয়েছিল)। তাঁর পরের সব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল রেস কোর্স ময়দান কিংবা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তৎকালীন জেলা-মহকুমা-থানা পর্যায়ে তিনি একাধিকবার সফর করেন। কোনো কোনো দিন তিন-চারটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক রেহমান সোহবান আমাকে বলেছেন- নারায়ণগঞ্জ থেকে শীতলক্ষ্যা নদ ধরে তাজউদ্দীন আহমদের নির্বাচনী এলাকা কাপাসিয়া যাওয়ার অভিজ্ঞতা। এক সকালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী হয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছান। তারপর লঞ্চে নদী পথে রওনা দেন ৫০-৬০ কিলোটিার পথ। নদীর দুই তীরে সর্বত্র মানুষ আর মানুষ- নারী-পুরুষ-শিশু। অনেকে শীতের মধ্যে নদীতে নেমে পড়েন, সাঁতরে লঞ্চের কাছে চলে আসেন বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে এক নজর দেখার জন্য।
এভাবে জনগণ নির্বাচনের আগেই তাকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মেনে নেয়। তিনি যেখানে যান, সর্বত্র একই চিত্র। জনগণের কাছে হয়ে ওঠেন আশার আলো, মুক্তির দূত। ১৯৭০ সালের ৯ এপ্রিল বাগেরহাট মহকুমার জনসভায় তিনি বলেন- ‘শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদ কেন, দুনিয়ার কোনো ঐশ্বর্য আর ক্ষমতা আমার পায়ের কাছে ঢেলে দিলেও আমি দেশের, বিশেষ করে বাংলার বঞ্চিত মানুষের সাথে বেইমানি করতে পারব না।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একটি পোস্টার ছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’ শিরোনামে। এতে পাকিস্তানের দুই অংশের আর্থ-সামাজিক চিত্র তুলে ধরে কীভাবে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- সেটা একরূপ চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়। সেই পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই তিনি পূর্ব বাংলার ওপর পরিচালিত শোষণের চিত্র তুলে ধরতে থাকেন। সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি এর অবসান ঘটাতে চেয়েছেন। সে জন্য চেয়েছেন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণের রায়। এই কর্মসূচি হচ্ছে ছয়-দফা। তিনি এটাও জানতেন, এ কর্মসূচি পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক শাসকগোষ্ঠী মানবে না। এ কারণে জনগণকে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাতে থাকেন। তিনি বার বার বলেন- ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন হচ্ছে ছয় দফা প্রশ্নে গণভোট। জনগণ এই গণভোটে বাঙালির অধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের অগ্রণী হাতিয়ার হিসেবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগকেও গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৬৯-এর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যে ১৪২টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার মধ্যে ১৩২ টিতে জয়লাভ করে ছাত্রলীগ।
আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়- পশ্চাশের দশকে তিনি যে সব তরুণ নেতাকে জেলা ও মহকুমা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছিলেন, সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পোড় খেয়ে, জেল-জুলুম সহ্য করে তারা ষাটের দশকের মাঝামাঝি জেলা-মহকুমা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতায় পরিণত হন। এদের কয়েকজনকে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। তাজউদ্দীন আহমদ পঞ্চাশের দশকে ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। এভাবে তিনি সংগঠনে নিবেদিতপ্রাণ ও জনসমর্থনপুষ্ট একদল নেতাও তৈরি করতে পারেন, যারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাকে সর্বতোভাবে সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তাকে গ্রেফতার করা হলে এই নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত সহকর্মীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাভূত ও নিঃশর্তে আত্মসমর্পনে বাধ্য করায় অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমান চক্র এই জাতীয় নেতাদের লোভ-প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নতিস্বীকারের অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু আরেকটি বিষয়ে মনোযোগী ছিলেন- এককভাবে আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত করা। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যুক্তফ্রন্টের এমন কিছু ব্যক্তি এবং ছোট ছোট কয়েকটি দল যুক্ত হয়েছিল যাদের কাছে বাংলার অধিকার ও স্বার্থ নয়, বরং যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই মুখ্য ছিল। তারা স্বায়ত্তশাসনের কথা বলত না, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জনগণকে যেভাবে বিভ্রান্ত করছে তার বিরুদ্ধে বলত না। কৃষ-শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে দাবি তুলত না। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের কথা বলত না। যুক্তফ্রন্ট সরকার অন্যায়ভাবে ভেঙে দিলে তাদেরও অনেকে প্রতিবাদ করে নাই। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেন- ‘আমি ভূঁইফোড় দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যে বিশ্বাসী নই। জগাখিচুড়ি যুক্তফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া গেলেও জনসাধারণের কোনো উপকার করা যায় না।’
নির্বাচনে তাঁর দল পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার (১৫৭) চেয়ে মাত্র ১০ টি আসন বেশি। তিনি পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির চাতুর্যের বিষয়ে সাম্যক অবগত ছিলেন। তারা লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে, ভীতি প্রদর্শন করে ১০-১২ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে দলে টানার অপচেষ্টা চালাবেই। এ কারণে তিনি নির্বাচনের কয়েকদিন পর ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেস কোর্স ময়দানে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের চার শতাধিক সদস্যকে ১০ লক্ষাধিক নারী-পুরুষকে স্বাক্ষী রেখে শপথ বাক্য পাঠ করান। তিনি জনগণকে বলেন, ‘যদি কেউ ছয় দফার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বাংলার মানুষের সঙ্গে বেইমানি করে- তাকে জ্যান্ত কবর দেবেন।’
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর পাবলিক রিলেসন্স অফিসার ছিলেন সিদ্দিক সালেক। তিনি উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থে লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান কী চাইছেন সেটা আমাদের জানা ছিল তিনি বার বার বলেছেন, একবার জনগণের রায় পেলে আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সব ক্ষমতার ভিত্তি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) টুকরো টুকরো করে ফেলব।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর বিপুল বিজয়লাভের ঘটনা পাকিস্তানের শাসকচক্রকে হতচকিত করে। তারা ভেবেছিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। তবে অন্য দক্ষিণপন্থী দলগুলো স্বল্প সংখ্যক আসন পেলেও তাদের নিয়ে কেন্দ্রে সামরিক জান্তা সমর্থিত সরকার গঠিত হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলার নিরঙ্কুশ সমর্থন সব হিসাব-নিকেশ উল্টে দেয়। এ অবস্থায় ইয়াহিয়ার এক বিশ্বস্ত সেনা অফিসার পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে বলেন, ‘Don’t worry… we will not allow these black bastards to rule us.’ [সূত্র: উইটনেস টু সারেন্ডার, পৃষ্ঠা ২৯]
পাকিস্তানি জান্তা বাঙালিকে কী বিদ্বেষের মনোভাব নিয়ে দেখত, সেটা এ ভাষ্যে স্পষ্ট। কিন্তু বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ওপর শাসন-শোষণ পরিচালনা করতে চায়নি। তারা চেয়েছে নিজস্ব স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। এ জন্য যে কোনো ত্যাগস্বীকারে তারা প্রস্তুত ছিল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সেভাবেই প্রস্তুত করেছিলেন। জনগণও বঙ্গবন্ধুকে এ ম্যান্ডেট দিয়েছিল ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তিনি এ ম্যান্ডেট অনুসারে এগিয়ে যান দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার ম্যান্ডেট প্রদানের দিন ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বর। এ অনন্য ঘটনার ৫০ বছর পূর্তির দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে রযেছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।