১০ মিনিটে ৮০ লাখ টাকা লুটে নিল অস্ত্রধারীরা, গ্রেপ্তার ৫
গাজীপুরের কালিয়াকৈর সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস গার্মেন্টসের মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সময় মাত্র ১০ মিনিট। পথের মধ্যে একটি মাইক্রোবাস আটকালো এক দল ডাকাত। তড়িঘড়ি করে গুলি ছুড়ল গাড়ির গ্লাসে। গ্লাস ভাঙা শেষে গাজীপুরের কালিয়াকৈর সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস গার্মেন্টসের মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।
ঘটনাটি গত ৭ জুনের। ওই ঘটনায় তদন্তে নেমে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) ঘটনার মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ৭ জুনে ঘটনাটি ঘটানোর প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকে ডাকাতরা ওই গার্মেন্টসে কর্মী বেশে প্রবেশ করতেন প্রায়ই। এভাবে তারা তদারকি করতে থাকেন বেতনের টাকা কীভাবে নিয়ে যাওয়া হবে গার্মেন্টেসে। কারণ, ইনক্রেডিবল গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন নগদ দেওয়া হয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহের সময় কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না। তারপর ছক কষে ডাকাত চক্রটি লুট করে নিয়ে চলে যায়।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মো. জলিল (৪০), মো. রিজাজ (৩৬), সাগর মাহমুদ (৪০), ইসমাইল হোসেন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মণ্ডলকে (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের শনিবার রাত থেকে আজ রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ সাভার ও আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে চক্রটির মূলহোতা জলিলের পরিকল্পনায় ইসমাইল হোসেন ও মনোরঞ্জন মণ্ডল দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ শেষে টার্গেট নির্ধারণ করেন। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোরঞ্জন ওই গার্মেন্টসে সাব-কন্ট্রাক্ট হিসেবে মার্চ থেকে আসা-যাওয়া শুরু করেন। এরপর গার্মেন্টসের অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও অন্যান্য জায়গা থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতেই ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত এপ্রিল-মে মাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করলেও তা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিলের বেতন দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এবং মে মাসের বেতনের টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে। তবে জুন মাসের বেতন পুলিশ স্কট থাকবে না নিশ্চিত হয়ে ৭ জুন ডাকাতির দিন নির্ধারণ করে। ঘটনার ১২-১৫ দিন আগে ইসমাইল, জলিল ও মনোরঞ্জন মাঠ পর্যায়ে রেকি করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করেন।’
সারওয়ার বিন কাশেম আরো বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন একটি সুবিধাজনক জায়গায় মিলিত হয়। পেছনের আরোহীদের সবাই অস্ত্র বহন করেছিল। অন্যদিকে ছিনতাইয়ের টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। আর মনোরঞ্জন গার্মেন্টস এলাকা থেকে ডাকাতদলটিকে প্রতি মুহূর্তের তথ্য সরবরাহ করছিল। সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইলে মূলহোতা জলিলকে টাকা উত্তোলনের জন্য গার্মেন্টসের লোকজন মাইক্রোবাসে ব্যাংকের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে জানান মনোরঞ্জন। তথ্যের ভিত্তিতে সফিপুরে অপেক্ষমাণ তিনটি মোটরসাইকেল নিরাপদ দূরে থেকে মাইক্রোবাসটি অনুসরণ করতে থাকে। টাকা উত্তোলনের পর ফেরার পথে খাড়াজোড়া এলাকায় দুটি মোটরসাইকেল মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে মাইক্রোবাসের গতি কমিয়ে দেয়। তৃতীয় মোটরসাইকেলটি মাইক্রোবাস থামিয়ে দিয়ে কৌশলে ব্যারিকেড দিয়ে ফেলে।
সারওয়ার বলেন, ‘এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং অতর্কিতভাবে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে গুলি ছোঁড়ে। এতে একটি গুলিতে ফ্যাক্টরির সহকারী মার্চেন্ডার রাজীব মজুমদার গুরুতর জখম হন। পরবর্তী সময়ে তারা মাইক্রোবাসে থাকা ফ্যাক্টরির লোকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাত্র ৫-১০ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলে এলোপাতাড়ি গোলাগুলির ফলে দলের মূল হোতা জলিলের হাতেও গুলিবিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা মোটরসাইকেলে করে জামগড়া কাশিমপুর রোডে অপেক্ষায় থাকা প্রাইভেট কারের কাছে পৌঁছান। গুলিবিদ্ধ জলিল এবং লুটকৃত টাকা নিয়ে সাগর ও রিয়াজ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।’
র্যাব কর্মকর্তাবলেন, ‘ঢাকায় আসার পর তারা প্রথমে সাগরের খিলগাঁওয়ের বাসায় যান। সেখান থেকে জলিলকে মালিবাগের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পথে টাকাগুলো ভাগ করে নেন। অপারেশনে অংশগ্রহণ ভেদে সবাইকে পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ ২০ হাজার টাকা এবং অস্ত্রবহন ও গুলি এবং প্রাইভেট কার প্রদান করার জন্য আলাদা আলাদাভাবে টাকা দেওয়া হয়। মূলত ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট এই ডাকাতির ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’