বঙ্গবন্ধুর পরে তাঁর কন্যার কাছেও আমাদের অনেক ঋণ আ

জাতীয় রাজনীতি

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক: সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আমরা ঋণী। কারণ গত কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের কখনো কোনো স্বাধীন ভূখন্ড ছিল না। ভারতবর্ষের অন্য অঞ্চলের শাসকরা তো বটেই, এমনকি তাতার, মঙ্গোল, এশিয়া মাইনর, আফগানিস্তান, এমনকি সুদূর তুরস্ক থেকেও সেনাদল এসে একের পর এক আমাদের দেশ দখল করেছে, আমাদেরকে শাসন করেছে। এই শাসকদের মধ্যে লুণ্ঠনকারী যাযাবর ডাকাতরা যেমন ছিল, তেমনি ছিল দলছুট বা ভাগ্যান্বেষী সেনাদলের সেনাপতি, এমনকি নিজ দেশে ক্রীতদাস থেকে এখানে এসে শাসক বনে যাওয়া সুলতানও।

বঙ্গবন্ধুই আমাদেরকে এই লজ্জা থেকে মুক্তি দিলেন। তিনি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে দীর্ঘদিনের অব্যাহত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলেন। বঙ্গবন্ধু সুপ্ত-বিচ্ছিন্ন বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে মানুষের মধ্যে জাগ্রত করেছেন। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে তিনি শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই নয়, বরং বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও জীবনাচরণেও অন্তর্ভুক্ত করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদকে তিনি বাঙ্গালি জাতিসত্ত¡ায় রূপান্তরিত করলেন। ইতিহাসে এই প্রথমবার বাঙ্গালি অনুভব করলো যে তারা একটি অপার বৈশিষ্ট্যময় বাঙ্গালি জাতি। জাতিসত্ত্বার এই বোধকে শাণিত করে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র বাঙ্গালি জাতিকে তিনি ধীরে ধীরে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত করলেন এবং একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ নামের একটি সর্বাত্মক জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙ্গালিকে একটি জাতিরাষ্ট্র উপহার দিলেন। ইতিহাসে এই প্রথমবার বাঙ্গালি স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধু হলেন বাঙ্গালি জাতির জনক। জনগণের রায়ে বিবিসির জরিপেও তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। এই একক ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্রের জন্য আমরা তাঁর কাছে ঋণী।

কিন্তু কিছু বিশ্বাসঘাতক পরাজিত পাকিস্তান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশটিকে পুনরায় ঔপনিবেশিক পাকিস্তানীকরণের অপচেষ্টা করে। তারা সর্বতোভাবে ইতিহাসকেও পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, যাকে পরবর্তীকালে দেশের মানুষ ‘দেশরত্ন’ উপাধি দিয়েছে, তিনি এগিয়ে এসে হাল ধরলেন। বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূ-অন্যান্য স্বজন হারানোর পর্বতসম বেদনা বুকে চাপা দিয়ে রেখে মানুষকে বঙ্গবন্ধুর মতোই ডাক দিলেন। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন, সেই স্বপ্ন তিনি আবার ফিরিয়ে আনলেন। ক্রমাগত বাধার জঞ্জাল পেরিয়ে দেশের মানুষের জন্য আনতে লাগলেন একের পর এক সুকঠিন অর্জন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকদিন বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলেন। তারা ক্রমাগত দেখেছিলেন পাকিস্তানি স্টাইলে সন্ত্রাসের, জঙ্গী জন্মদানের আর দুর্নীতির মহোৎসব। বহুদিন পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা পুনরায় মানুষকে স্বপ্ন দেখালেন যে তিনি এগুলো দূর করবেন। তাছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের তালিকায় তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন।

অনেকেই বিষয়টাকে কথার কথা বলে হালকাভাবে নিয়ে অবিশ্বাস করেছিলেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য একটার পর একটা সাফল্য এনে দেখিয়েছেন তিনি যা বলেন তা কথার কথা নয়। তিনি যা বলেন তা ভবিষ্যতের স্বপ্ন আর বিশ্বাস থেকে বলেন। যে স্বপ্ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং সেই সব অনুপ্রাণিত মানুষদের নিয়ে তিনি একটার পর একটা সাফল্য অর্জন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। বাংলাদেশ সরকার নয়, কোন এনজিও বা দাতা সংস্থা নয়, খোদ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলে ঘোষণা দিল। গত বছর স্বাধীনতার মাস এই মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত দেশ নয়, এটি এখন উন্নয়নশীল দেশ।

জাতিসংঘ যে তিনটি সূচককে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মূল্যায়নের সময় বিবেচনা করে থাকে সেগুলো হলো মানবসম্পদের উন্নয়ন বৃদ্ধি, কম অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এবং জাতীয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। বাংলাদেশ এই তিনটিতেই নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি অর্জন করেছে, যদিও এর মধ্যে মাত্র দুটি শর্ত পূরণ হলেই হয়। কিন্তু বাংলাদেশ তিনটি সূচক বা শর্তই পূরণ করেছে। নিয়মানুযায়ী মানবসম্পদের উন্নয়নে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৬৬ পয়েন্ট পেতে হবে, বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৮.৭ পয়েন্ট। কম অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার ক্ষেত্রে পয়েন্ট হতে হবে ৩২ এর নিচে, এখানে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫.১১ পয়েন্ট। জাতীয় মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১,২৪২ মার্কিন ডলার হতে হবে, যেখানে তখন বাংলাদেশের ছিল ১,৬১০ মার্কিন ডলার। এখন তা আরো বেড়েছে।

দেশে এখন শহরে বা গ্রামে কোথাও খালি গায়, খালি পায় ও খালি পেটে কোনো মানুষ নেই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দৃশ্যমান। দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষজনের সংখ্যা কমেছে। অতিদরিদ্র বা হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যাও কমেছে। মানুষের কাজের সুযোগ, উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক শক্তি বেড়েছে।

পাকিস্তানিরা আর এখানকার সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীরা ভেবেছিল ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন চাপে পড়বে যে ‘কোলাপস্’ করবে। অনুমান করি সেজন্যই তারা রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে মিয়ানমারকে ইন্ধন জুগিয়েছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের কিছু কষ্ট হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েনি।

পৃথিবীতে অনেক উন্নত সমৃদ্ধ দেশও কয়েক লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হিমশিম খায়, অস্বীকার করে, সীমান্ত বন্ধ করে, আরেক দেশে ঠেলে দেয়। সেখানে বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল ও সীমিত সম্পদের দেশ হলেও ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধুমাত্র মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত গরিব দেশ থাকলে এটি সম্ভব হতো না। 

তবে এখনো কিছু লোক আছে যারা বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার মতো দারুণ সাফল্যকে বিভিন্ন কথা বলে ম্লান করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশের মানুষ এদেরকে চেনে। তাদের কদর্য অতীতের কথা মানুষ ভুলে যায়নি। তাই এদের কথার জন্য দেশ বসে থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর পর এবার বঙ্গবন্ধু-কন্যার স্বপ্নও পূরণ হতে শুরু করেছে।

তাঁকে ঊনিশবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই ষড়যন্ত্র ছিল ভয়াবহ। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্র। এখন জানা গেছে যে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী। তারা যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড ও এগুলো ছুঁড়ে মারার বিশেষ প্রশিক্ষণ আততায়ীদেরকে দিয়েছিল। (এখন আবার সেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, যার আরেক পরিচয় তিনি ১৯৭১ সালের গণহত্যাকারীদের শিরোমনি জেনারেল নিয়াজীর ভাতিজা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন!) মারাত্মক এসব ষড়যন্ত্র থেকে তিনি বারবার বেঁচে গেছেন।

২১ আগস্টের হত্যা প্রচেষ্টার বিবরণ পড়ে মনে হয় এরকম নিশ্চিত মৃত্যু থেকে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া কিছুতেই তাঁর বাঁচার কথা নয়। সম্ভবত দেশের গরিব মানুষগুলোর জন্য আরো কিছু ভালো কাজ করার জন্যই আল্লাহতায়ালা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রতিবার হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর মনে হয় তিনি আরো বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও স্থির-সংকল্প হয়ে ওঠছেন। নইলে মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি না দেওয়ার জন্য বৃহৎ শক্তিসমূহসহ প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ, এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের অনুরোধও তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন না।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছিলেন গ্যাস রপ্তানি করার জন্য চুক্তি করতে। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই ছিল প্রথম বাংলাদেশে আগমন। কিন্তু নেত্রী স্পষ্ট বলেছিলেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগতম। তবে বিদেশী নয় দেশীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে যদি দেখা যায় যে বাংলাদেশে আগামী ৫০ বছরে যে পরিমাণ গ্যাস দেশের জ্বালানী ও শিল্প-কারখানার কাজে লাগবে তার চেশে বেশি মজুদ আছে তখন উদ্বৃত্ত গ্যাস রপ্তানির কথা ভাবা হবে, তার আগে নয়। তাও পাইপলাইনে ভারতে নয়, রপ্তানি করলে সিলিন্ডারে করা হবে। দেশের স্বার্থে তিনি তা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরিই বলেছিলেন। ভয় পাননি। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় বসতে পারলে তিনি মার্কিন শর্তে গ্যাস রপ্তানি করবেন। তার কাছে দেশের স্বার্থ নয়, ক্ষমতায় বসাই বড় ছিল। আন্তর্জাতিক চক্র খুশি হয়ে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, যদিও নাগরিকদের প্রবল আন্দোলন ও উত্তাল রাজপথের কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত গ্যাস রপ্তানি করতে পারেননি।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা সরকার গঠনের পরপরই থেমে থাকা ফারাক্কা সমস্যার সমাধান করলেন। আগের বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশ ফারাক্কা দিয়ে পানি পেয়েছিল মাত্র ৯,০০০ কিউসেক। কিন্তু শেখ হাসিনা নিম্নতম ৩৪,০০০ কিউসেক পানির নিশ্চয়তার চুক্তি করলেন। সে সময় বাংলাদেশ এর কমতো নয়ই বরং একবার ৬৪,০০০ কিউসেক পর্যন্ত পানি পেয়েছিল। একই বছর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ে যুগের পর যুগ ধরে যে রক্তক্ষয়ী অশান্তি চলছিল তার অবসান ঘটান। তিনি যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ সমাপ্ত করেন। সেখানে রেলপথ সংযোজন করেন। ১৯৯৮ সালের প্রলংকরী বন্যার সময় দুস্থ মানুষকে বাঁচাতে সারা দেশে অতি গরিবদের দীর্ঘদিন ধরে খাবার সংস্থানের জন্য তাদের মধ্যে তিন কোটি ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করেন। ২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভারতের সাথে দীর্ঘ অর্ধ শতকের বেশি সময় ধরে চলে আসা অত্যন্ত অমানবিক ছিটমহল সমস্যার অবসানে স্থল সীমান্ত চুক্তি করেন। এরপর তিনি ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা চুক্তি সম্পন্ন করেন। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যার রূপরেখা বঙ্গবন্ধুই করে গিয়েছিলেন। জাতির বীর বলে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে তাদের জন্য সম্মানজনক করেছেন ও আরো বাড়াবেন বলেছেন। এখন আর্থিকভাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন। উন্নত বিশ্ব ও কল্যাণরাষ্ট্রগুলোর মত প্রবীণ ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি মোট ১৮ রকমের ভাতা চালু করেছেন। সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছেন। এক্সপ্রেস ওয়ে এবং অনেকগুলো সেতুসহ বিশ্ব ব্যাংকের প্রবল বাধা সত্তে¡ও দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন। আরো করছেন দুরন্ত কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ নাকি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের ওপর জঙ্গী হামলা ও বর্তমানের করোনা মহামারি সত্তে¡ও এগিয়ে চলছে এবং আগামী বছরই তা চালু হবে। প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে। ধান উৎপাদনে দেশ স্বনির্ভর হয়েছে। শিল্প-কারখানার আরো প্রসার ঘটেছে। দেশের অধিকাংশ কাজ এখন ডিজিটালাইজড্ হয়েছে। অফিসগুলো থেকে কাগজের ফাইলপত্র বিদায় নিয়ে ডিজিটাল ফাইল চালু হচ্ছে। একটি গরিব দেশ কিভাবে ডিজিটালাইজড্ হতে পারে বাংলাদেশ তার রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, যা বিদেশিরা অনুসরণ করছে। সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ ও খাদ্য সরবরাহের বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশের তৃতীয় জাতীয় ওষুধনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশ এখন ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। করোনা চিকিৎসার ওষুধ উন্নত দেশে আবিষ্কৃত হওয়ার পরপরই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বিক্রির পাশাপাশি সেগুলো বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। করোনা টিকা আবিষ্কার হওয়ার পরই তা কেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশেও করোনা টিকার উৎপাদনের জন্য চারটি কোম্পানি প্রস্তুত হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যার সরকারের অনেক কাজের মধ্যে এগুলো কিছু উদাহরণ মাত্র। আরো অনেক কাজের উল্লেখ অবশ্যই করা যায়।

অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা ভালোভাবেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করি। এভাবে চলতে পারলে এই বাংলাদেশ অবশ্যই একদিন সোনার বাংলা হবে। বঙ্গবন্ধু দুস্কৃতকারীদের হাতে নিহত না হলে বাংলাদেশ এতদিনে তা হয়ে যেত। বিশেষজ্ঞরা হিসেব করে তাই বলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যা স্বপ্ন দেখানো ছাড়াও ইতোমধ্যে বিশ্বসভায় আমাদের একটি পরিচয় নিশ্চিত করে দিয়েছেন। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে চেনে উদীয়মান শক্তি হিসেবে।

জার্মানির গত সাধারণ নির্বাচনে এঞ্জেলা মারকেল তার নির্বাচনী পোস্টারে বিভিন্ন বিশ্বনেতার ছবির সাথে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ব্যবহার করেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের অনেক বিখ্যাত কর্ণধারও যেখানে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন, সেখানে আমাদের শেখ হাসিনা বিশ্বের তৃতীয় সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতিক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বিদেশী গবেষণা সংস্থা বলেছে ২য় সফলতম প্রধানমন্ত্রী। সিঙ্গাপুর সরকার বিখ্যাত বিশ্বনেতাদের নামে তাদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন অর্কিডের নামকরণ করে থাকে। বেশ কয়েক বছর পর গতবার তারা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নামে তাদের উদ্ভাবিত একটি সুদৃশ্য অর্কিডের নামকরণ করেছে। সেটি উদ্বোধনের জন্য তারা আবার তাঁকেই রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ডেকে নিয়ে গেছে। এরকম অসংখ্য ভালো খবরের প্রতিটির জন্য কী পরিমাণ দেশপ্রেম, সাহসিকতা, আন্তরিকতা, সততা, মানবিকতা, পরিশ্রম ইত্যাদির প্রয়োজন হয় তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা করতে হয় না।

এই বিরাট অর্জনগুলোর জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। মানুষ যখন জাগছে, অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে, তখন কিছু লোকের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, পেট্রোল বোমা আর জঙ্গীপনাকে সরকার ঠিকই রুখে দিতে পারবে। অর্থনীতি-সমাজনীতির এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ঠিকই উন্নত-সমৃদ্ধ-কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কাতারেও শামিল হতে পারবে এই বিশ্বাস আমাদের আছে।

ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু-কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁর কাজের জন্য আমাদের বাঙ্গালির অনেক ঋণ জমা হয়ে গেছে। সামনে আরো হবে। বঙ্গবন্ধু দেশটার রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তাঁর কন্যা দেশটাকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন ও সমতাভিত্তিক বিতরণের সঠিক রাস্তায় চলতে শেখাচ্ছেন। বিশ্বসভায় আমরা এখন মাথা নত করে নয়, বরং মাথা উঁচু করে চলতে শুরু করেছি। তাঁর প্রতি এই ঋণ শোধ করা সম্ভব না। বরং এই ঋণ মনের মণিকোঠায় জমা থাক। যুগ যুগ ধরে। সম্ভব হলে আগামীর উজ্জ্বল বাংলাদেশের চিরন্তন ইতিহাসে।

লেখকঃ পরিচালক, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার; সাবেক চেয়ারম্যান, ফার্মেসি বিভাগ; সাবেক চেয়ারম্যান, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ; সাবেক ডীন, ফার্মেসি অনুষদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *