জেসিসি বৈঠকে দ্রুত তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের আহবান

জাতীয় প্রচ্ছদ

বাংলাদেশ আজ ভারতের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে দ্রুত তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ভারতের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, “আমরা ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আমরা সব সময়েই আশাবাদী।”
ভার্চুয়াল প্লাটফরমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত জেসিসি বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে মোমেন এ কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পানি বন্টন, বাণিজ্য, লাইন অব ক্রেডিট, সীমান্ত হত্যা, এয়ার বাবল, মহামারি এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ ব্যাপক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিস্তা ইস্যু ছাড়াও ছয়টি আন্তসীমান্ত নদী- মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পানি বন্টন চুক্তির খসড়া সম্পর্কেও আলোচনা হয়।
তারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনের সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করেন। এরআগে সর্বশেষ ২০১০ সালে নয়াদিল্লীতে জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোমেন বলেন,“অতি শিগগিরই জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।”
উভয় পক্ষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চলমান জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ এবং আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে যৌথ কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করেন।
জেসিসি বৈঠকে ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের অধীন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা এবং ঢাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদারকি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ডিসেম্বরে ভার্চুয়াল অথবা ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক মহামারি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
ঢাকা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা জোরদারের আহবান জানিয়েছে। ভারত নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
“এখানে ইউএনএসজি প্রস্তাব অনুযায়ী সংকট সমাধানের ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য আমরা ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি” উল্লেখ করে মোমেন বলেন,ভারত এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, তারা সীমান্তে হত্যা জিরো লেবেলে নিয়ে আসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, “সীমান্তে আমরা কোন মৃত্যু চাই না এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মতো বন্ধুপ্রতীম দেশের জন্য এটি লজ্জাজনক।”
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফরকালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিএসএফ’র হত্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ মনে করে, এটি সকল দ্বিপক্ষীয় চুক্তির লঙ্ঘন এবং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ জানানো উচিত।
চলতি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয় উদ্বেগের ব্যাপারে ভারতীয় পক্ষ সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধে “শেষ অবলম্বন” হিসেবে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহারে সম্মত হয়।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ভারত-বাংলাদেশ জেসিসি বৈঠকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান বহুমুখী সহযোগিতা জোরদারে চারটি সমজোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *