এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জে শিক্ষাবোর্ডের আয় ৫ কোটি ৫২ লাখ

অর্থনীতি শিক্ষাঙ্গন

মিজানুর রহমানঃস্টাফ রিপোর্টার।

 

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পেয়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭১ জন পরীক্ষার্থী ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছেন। এসব শিক্ষার্থীরা মোট ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯১৯টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।

 

প্রতি বিষয় আবেদনের জন্য ১২৫ টাকা হারে মোট ৫ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৫ টাকা বোর্ডকে দিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিবছর প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা নিচ্ছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নেয়া হয়। তবে টাকার পরিমাণ কমিয়ে দিলে অযথাই আবেদন করবে শিক্ষার্থীরা। পুনঃপরীক্ষণের ফল ৩০ জুন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক।

 

বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, গত ৭ জুন রবিবার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ শেষ হয়েছে। গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। যারা প্রত্যাশিত ফলাফল পাননি তারা গত ১ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পেরেছে।

 

তারা আরও জানান, পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৫৭ হাজার ৭৯০ জন পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৬০ টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছেন। এছাড়া বরিশাল বোর্ডের ২৩ হাজার ৮৫০ টি খাতা, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৫২ হাজার ২৪৬ টি খাতা, কুমিল্লা বোর্ডের ৩৯ হাজার ৩০৩টি খাতা, দিনাজপুর বোর্ডের ৪০ হাজার ৭৫টি খাতা,যশোর বোর্ডের ৩৪ হাজার ২৮৫টি খাতা, ময়মনসিংহ বোর্ডের ৩১ হাজার ৩৩১ টি খাতা,রাজশাহী বোর্ডের ৪৪ হাজার ৬১টি খাতা এবং সিলেট বোর্ডের ২৩ হাজার ৭৯০টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে।

 

তবে খাতা চ্যালেঞ্জ করার মানে এই নয় যে, খাতাগুলো নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে। বাস্তবে খাতাগুলোর নম্বর গণনা ঠিক আছে কিনা তা দেখা হবে। প্রতিবছর শত শত পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। কেউ ফেল করা থেকে জিপিএ ফাইভও পেয়ে থাকেন। একশ্রেণির পরীক্ষকদের উদাসীনতায় এমন ঘটনা ঘটে থাকে ফি বছর। অন্যদিকে এইসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ফি নেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো.জিয়াউল হক বলেন, আসলে যে ফি নেওয়া হয় সেটা খুবই অল্প। পরীক্ষকদের কাছে উত্তরপত্র পাঠানো এবং সেটা ফিরিয়ে আনা, রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য খরচ হয়। তাছাড়া যদি আরও কম ফি নেওয়া হয় তাহলে অনেকে অযথাই আবেদন করে বসবে। আবেদন পড়ে কয়েক লাখ কিন্তু ফল পরিবর্তন হয় কয়েক হাজার, এ দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।

 

যদিও প্রতি বছরই কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হওয়ার পেছনে পরীক্ষকদের অনীহা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষকদের অনীহা ঠিক সেভাবে হয়তো নেই, তবে এক একজন পরীক্ষক অনেক পরীক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়ন করেন। সেক্ষেত্রে তাদের ওপর চাপ থাকে অনেকখানি। সে কারণ হয়তো কিছুটা ভুল হয়ে যায়।

এর আগে গত ৩১ মে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে এসএসসি ও সমমানে পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে শিক্ষামন্ত্রী ফলের বিস্তারিত বিশ্লেষণ সংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

 

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাস করেছে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থী চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। গতবারের তুলনায় এবছর পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *