জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাস মোকাবেলায় পলিসি নির্ধারণে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ডেল্টা প্ল্যানের সমন্বয় করতে হবে উল্লেখ করে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, “বিভিন্ন দূর্যোগ অনেক মানুষকে অভিবাসন গ্রহণ করতে বাধ্য করে। জলাবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্যে যখন খাস জমি বিতরণ করা হয় তখন নারীদের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।
পলিসি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী ও তরুণসহ বিভিন্ন মহলের অংশগ্রণের সুযোগ থাকতে হবে এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণের অভিমত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
একশনএইড বাংলাদেশ এর আয়োজিত “এড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশঃ টেকিং হিউমেন রাইটস বেস এপ্রোচ” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এই কথা বলেন।
পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শিক্ষাকার্যক্রম ও লাইফস্কিল প্রোগ্রামে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ওয়াবিনারে একশনএইড বাংলাদেশ কর্ত্ক পরিচালিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসন সংক্রান্ত এক গবেষণায় প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয় । একশনএইড বাংলাদেশের অফিসার আনহারা রব্বানী ও মারিয়া আক্তার গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণায় বলা হয়, অচিরেই জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ১ কোটি ৮০ লক্ষ্য লোক অভ্যন্তরীন অভিবাসন গ্রহণ করবে এবং ২০৪১ সালে সেটি ২ কোটি ১৩ লক্ষ তে গিয়ে দাঁড়াবে ।
গবেষণায় আরোও বলা হয় নারী ও পুরুষের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈচিত্রপূর্ণ দক্ষতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে অভিবাসনে বাধ্য পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য কোন পদ্ধন্তি বা ইনফরেমশন সিস্টেম গড়ে উঠেনি বলেও গবেষণায় উঠে আসে। অভিবাসী মানুষদের মধ্যে সবসময় উচ্ছেদ হবার ভয় তাড়া করে বলে জানা যায় গবেষণা থেকে।
গবেষণায় এই সমস্যা উত্তরণে ন্যাশনাল স্ট্রেটিজি প্লান বাস্তবায়ন, ৮ম পঞ্চ বার্ষিকীর সাথে ডেল্টা প্ল্যান এর সমন্বয়, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোয় নারী ও যুবকদের দক্ষতা বিকাশে ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিজিটাল রিস্ক ও রেজিলিয়েন্স ইনডেক্স প্রতিষ্ঠা, অভিবাসী কর্মীদের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে জীবিকার সুযোগের উপর একটি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করাসহ কয়েকটি প্রস্তাবনা আনা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন ও মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর পরিচালক প্রফেসর সালেমুল হক তার বক্তব্যে বলেন, “অভিবাসন একটি চলামান প্রক্রিয়া। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন মোকাবেলায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ”।
যেসকল মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে অভিবাসন গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাদেরককে এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য শহরগুলোকে উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য তারা কাজ করছে বলে জানান প্রফেসর সালেমুল হক ।
বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি নিরূপণে দুই বছরের একটি পাইলট কর্মসূচি পরিচালনা করতে যাচ্ছে বলে তিনি তার বক্তব্যে জানান।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনকে একটি পুশ ফেক্টর উল্লেখ করে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এর চিফ এক্সিকিউটিভ এমডি সামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শহরমুখী অভিবাসীরা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শহরাঞ্চল এসকল জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য অনুকূলে নেই।
যারা অভিবাস নিয়ে শহরমুখী হচ্ছেন তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে বলেও তিনি জানান। জলবায়ুপরিবর্তনজনিত অভিবাস নিয়ে বিশেষায়িত ইন্সটিউট প্রতিষ্ঠার আহবানও জানান সামসুদ্দোহা।
ওয়েবিনারে আরও উপস্থিত এন অর্গানাইজেশন ফর সোশাল এন্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শামিম আরফিন বলেন, “দেশের দক্ষিনাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ । এই অঞ্চলের মানুষ বছরে বর আকারের দুই থেকে তিনটি সাইক্লোন মোকাবেলা করে থাকে । এরকম নানা দূর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে তারা আবাসস্থল ত্যগ করে শহরমুখী হতে বাধ্য হয় “।
শহরের বস্তি অঞ্চলে এসে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা না পেয়ে তারা এক ধরণের মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়ে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন । পাশাপাশি গ্রামে থাকতে তারা যে আয়মূলক কৃষিকাজসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিল সেটিও হারায় ভলে জানান তিনি ।
সংসপ্তক এর চিফ এক্সিকিউটিভ লিটন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুহারা বর্তমান সময়ে আলোচিত বিষয়। নিরাপদ জীবনের সন্ধানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অভিবাস বাড়ছে । তবে অধিকাংশ লোকই পাহাড়ের পাদদেশ কিংবা বেড়িবাধে আবাসস্থল গড়ে তুলছে যা খুবই ঝুকিপূর্ণ।
গত ১৫বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধ্বসে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান। বেড়িবাধ টেকসই করতে সরকারের তেমন কোন উদ্যোগ নেই বলে তিনি জানান। বেড়িবাধ রক্ষার্থে চার সারিতে গাছ লাগার আহ্বান জানান লিটন চৌধুরী।
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক-কেএফডাব্লিউ ক্লাইমেট ব্রীজ ফান্ড সেক্রেটারিয়েট এর প্রধান ড. এমডি গোলাম রব্বানী, ইন্টারনেশন্যাল সেন্টার ফর মাইগ্রেশন পলিসি ডেভেলপমেন্ট এর কান্ট্রি কো ওর্ডিনেটর এমডি ইকরাম হোসেন ।