অপরিকল্পিত নগরায়ণ, চট্টগ্রাম নগরীতে কৃষিজমি কমেছে প্রায় ৭শ’ একর

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি>

চট্টগ্রাম নগরীর কৃষিজোন এলাকায় অপরিকল্পিত শিল্প কারখানায় গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে বাঁধ না থাকায় ভাঙনেও নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। শুধু তাই নয়, আবাসনের ইটপাথর গিলে খাচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষিজমি। একসময় চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাহাড়তলি, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক কৃষি জমি দেখা যেতো। বর্তমানে সেখানে শুধু ভবন আর ভবন।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ১ শতাংশ করে আবাদি কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। প্রতি ২০ হেক্টর জমির এক হেক্টর (আড়াই একর) করে জমি ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। কৃষিজমি সুরক্ষার আইন না থাকার সুযোগে এমনটা অব্যাহত থাকলে একসময় বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে ২০২০-২০২১ সালে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬৮১ হেক্টর (ছয় লাখ ২৯ হাজার ২০২.৫ একর)।

পাঁচ বছর আগে ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ হেক্টর। ২০১০ সালে ওই জমির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬৬ হাজার ৭৮১ হেক্টর। এক দশকে ৩৭ হাজার একরের বেশি আবাদি জমি কমেছে। শুধু চট্টগ্রাম নগরীতে কমেছে প্রায় ৭শ’ একর জমি। কৃষিবিদদের মতে অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মাণ, শিল্পকারখানা স্থাপন, ইটভাটাসহ নানা স্থাপনায় হারিয়ে গেছে এসব জমি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের উত্তরাংশে মুজুরীবিল ও হৈল্লাবিল নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়ে তুলেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা। হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের বিশাল লালাচন্দ্র বিলের বাথুয়া মৌজায় গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবন। গড়া হয়েছে খামারবাড়ীও। অনন্যা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন নয়াহাট ও পাঁচলাইশ চালিতাতলী বাজারসংলগ্ন দক্ষিণা বিলেও গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি আবাসিক এলাকা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১২ বছরে নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকাগুলোর জমি ছিল অনেক কৃষক ও কৃষিজীবী পরিবারের জীবন-জীবিকার স্থান। এখানকার মুজুরীবিল ও হৈল্লাবিলের মতো শিগগিরই হারিয়ে যাবে বিশাল লালাচন্দ্র বিলটিও।

নগরের পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, পাহাড়তলী, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় আগে অনেক কৃষিজমি ছিল। বর্তমানে সেখানে শুধু ভবন আর ভবন। একসময় পতেঙ্গার কালো রঙের তরমুজের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। শিল্প-কারখানা, আবাসিক এলাকা, কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপনের কারণে সেই জমিতে তরমুজের চাষ আর হয় না।

ফসলি জমিতে গড়ে উঠা স্থাপনা অবৈধ বলছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সিডিএ কোনো আবাদি জমিতে স্থাপনা নির্মাণে নকশা অনুমোদন দেয় না। কৃষি জমিতে সেসব স্থাপনা গড়ে উঠছে সেগুলো অনুমোদনীন। অবৈধ এসব স্থাপনা যেকোনো সময় ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানিয়েছেন।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে আবাদি জমির সংখ্যা কমছে। প্রতিবছর এই হার বাড়ছে। গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩২ হাজারের বেশি একর জমি কমেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *