নিখাদ খবর ডেস্ক >
ভারতের কলকাতায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সমাপ্ত হয় ‘আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসব-২০২৪’। বিপুল আয়োজনে সমৃদ্ধ, নান্দনিকভাবে সাজানো এবং প্রাণিত প্রেরণায় উদ্দীপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভারতের অতি জনপ্রিয় মিউজিক একাডেমি ‘তাপস কুমার পাল একাডেমি অফ মিউজিক’। অনুষ্ঠানটি কলকাতাস্থ ‘নিরঞ্জন সদন’ মিলনায়তনে সম্পন্ন হয়। উৎসবে দেশবিদেশের গুণী শিল্পীগণ অংশগ্রহণ করে।
কেবল সুর ও সঙ্গীত বিষয়ে মনোমুগ্ধকর উপস্থাপন নয়, অনুষ্ঠান মঞ্চে সুর ও সঙ্গীত জগতের বিভিন্ন ধারায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ভারত ও অন্যান্য দেশের পাঁচজন গুণীশিল্পীকে ‘প্রজ্ঞা আন্তর্জাতিক পুরস্কার-২৪’ প্রদান করা হয়। পুরস্কার গ্রহণ করেন- পণ্ডিত অচ্যুত রাম ভাণ্ডারি, পণ্ডিত কানাই লাল ভট্টাচার্য, গায়ক খোদাবক্স ফকির, বিদুষী সুলয়া ব্যানার্জি ও পণ্ডিত অশোক কুমার সেনগুপ্ত। এই পাঁচজন শিল্পী অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করেন। প্রদীপ প্রজ¦লনে তাঁদের সঙ্গে অংশ নেন গৌড়ীয় নৃত্যের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. শ্রীমতী মহুয়া মুখোপাধ্যায়, তবলা বাদক অধ্যাপক পরিমল চক্রবর্তী, কবি তনুশ্রী ভট্টাচার্য এবং অ্যাকাডেমির কর্মকর্তাগণ। গৌড়ীয় নৃত্যের আধারে গুরুবন্দনা করেন নবনীতা নস্কর ও জিনিয়া নস্কর। তারপর গৌড়ীয় নৃত্যসহ যোগে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে অতিথিদের বরণ করা হয়। অতিথি বরণের পর উপমহাদেশের প্রখ্যাত বেহালা গুরু স্বর্গীয় ভিজি যোগের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পণ্ডিত ভি.জি যোগ উত্তর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে একক বেহালা বাদন প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন এবং নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করেন। আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাকাডেমির প্রধান সুরসাধক শ্রী তাপস কুমার পাল। তারপর অন্যান্য বক্তাগণ সুর ও সঙ্গীত বিষয়ে সারবান বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বেহালা সম্রাট পদ্মভূষণ পণ্ডিত ভি.জি যোগ রচিত কম্পোজিশন নিয়ে শ্রী তাপস কুমার পাল সংকলিত Recherché Composition of North Indian Violin. ( Part-1) শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক অবমোচন করা হয়। গ্রন্থের ভূমিকা লেখেন বাংলাদেশের লেখক-গবেষক প্রফেসর কালাম মাহমুদ। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন গৌড়ীয় নৃত্যের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং বিখ্যাত তবলা বাদক অধ্যাপক পণ্ডিত পরিমল চক্রবর্তী। গ্রন্থটি প্রকাশ করেন এন.ই পাবলিশার্স-এর কর্ণধার শ্রীস্বপনকুমার ঘোষ। প্রচ্ছদ অঙ্কনে মিনু দে।
অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে উপস্থাপিত হয় আকর্ষণীয় মেগা ভায়োলিন অর্কেস্ট্রা। এই পর্বে পঞ্চাশজন বেহালাশিল্পী অংশগ্রহণ করেন। তাদের চমৎকার উপস্থাপনে এক মনোজ্ঞ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পর্বটি পরিচালনা করেন শ্রী তাপস কুমার পাল। বিভিন্ন যন্ত্র সঙ্গীতে বাদনে অংশ নেন অ্যাকাডেমির শিল্পীবৃন্দ। সেতার, এসরাজ, বাঁশি, ঢোল, খোল, তবলা তানপুরার সুমিত সমন্বয়ে এক বিচিত্র ও নান্দনিক সুরস মাহার উপহার দেয় এই মিউজিক একাডেমি।
বেহালা পর্বে যারা অংশ নেন তাদের মধ্যে অন্যতম- ঐন্দ্রিতা সিনহা, আদ্রিতা ঘোষ, আশ্রিকা চক্রবর্তী, অনন্যরূপ হালদার, অনুপ কুমার বিশ্বাস, ঈশানী রায়, বিশ্বদীপ বিশ্বাস, ড. চিরঞ্জীব দে, দেবাংশু নস্কর, দেবশ্রী গোস্বামী, দিশারী পানি, ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, জয়মাল্য ভট্টাচার্য, ময়ূরিকা রায়, মিনু দে, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাকেশ কুমার রক্ষিত, রিম্পা হালদার, সঞ্জয় রায়, শাক্যসিংহ মজুমদার, স্ট্রাহান অভিষেক রায়, পল্লবিতা চাটার্জি প্রমুখ। সেতারে ছিলেন- অনিন্দিতা ঘোষ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এসরাজ বাদনে- শুভ্র দে, শুভ্র মজুমদার, দেবশ্রী গোস্বামী। এসরাজ ও বাঁশিতে- জাহ্নবী রায় বর্মণ। তবলায়- বিকাশ পাল, সমীর লাল ঘোষ, মঙ্গল দাস। বাংলা ঢোলে- সুব্রত নট্ট। শ্রীখোলে-ড. হরেকৃষ্ণ হালদার। পারকাশনে- জয় ভট্টাচার্য। সিনথেসাইজার- জয়ন্ত আদক। তানপুরায়- পাওলি চক্রবর্তী ও মৌমিতা ঘোষ।
প্রজ্ঞা আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল মেগা ভায়োলিন অর্কেস্ট্রায় বাংলার নিজস্ব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা। এ পর্যায়ে শ্রীখোল বাদনে হরেকৃষ্ণ হালদার ও রঞ্জিত হালদার আর বাংলা ঢোল বাদনে সুব্রত দত্ত বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। নেপালের কাঠমান্ডু থেকে আগত, প্রজ্ঞা পুরস্কার প্রাপ্ত পণ্ডিত অচ্যুত রাম ভাণ্ডারি মাদল বাজিয়ে চমক সৃষ্টি করেন। তারপর মাদলটি একাডেমিকে দান করেন।
অনুষ্ঠানপর্বে পদ্মভূষণ বেহালাসম্্রাট ভি.জি যোগের সম্মানে “The Fast Day Cover Postage Stamp” শুভ উদ্বোধন করেন গৌড়ীয় নৃত্যের শিল্পী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ডিন, অধ্যাপিকা ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তবলা বাদক অধ্যাপক পণ্ডিত পরিমল চক্রবর্তী।
মঞ্চে দাশুরথি রায়ের পাঁচালি পরিবেশন করেন পণ্ডিত কানাই লাল ভট্টাচার্য। আধ্যাত্মিক সঙ্গীত গেয়ে শ্রোতাদের আনন্দদান করেন আধ্যাত্মিক সংগীতগুলো খোদাবক্স ফকির। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবাংলার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ভারতের পশ্চিমবাংলা ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে আগত সাহিত্যশিল্পী, সংস্কৃতিসেবী, সুরসাধকগণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থাপনায় ছিল ড. শুভাশিস বসু, জয়তী মুখার্জি, ড. চন্দন রায়। ‘তাপস কুমার পাল একাডেমি অফ মিউজিক’ আয়োজিত মিউজিক উৎসব সারা ভারত ও ভারতের বাইরে বিশেষভাবে সাড়া জাগায়। কলকাতার ভক্ত-শ্রোতাবৃন্দ এক অনন্য সন্ধ্যা উপভোগ করে।