এক উপজেলার ১৯ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, দুর্ভোগে সেবা প্রত্যাশীরা।
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক।।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের সেবা প্রত্যাশীরা।
শনিবার (২৪ আগষ্ট) উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে দেখা যায়, নীলকমল’র চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখন , ও চরমানিকা’র চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাসেল তাদের বাড়ির কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থাকায় তারা কার্যালয়ে এসে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করছেন। তবে পরিষদ কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি ওসমানাগঞ্জ’র চেয়ারম্যান কাসেম মোল্লা, আসলামপুর’র চেয়ারম্যান কাসেম মেলেটারি,
চরমাদ্রাজ’র চেয়ারম্যান আব্দুল হাই, ওমরপুর’র চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল ইসলাম,
জিন্নাগড়ের চেয়ারম্যান মো. হোসেন মিয়া,
আমিনাবাদ’র চেয়ারম্যান মো.সায়েদুর রহমার (মিঠু), নূরাবাদ’র চেয়ারম্যান আনোয়ার, আহম্মদপুর’র চেয়ারম্যান ফখরুল,
চরকলমি’র চেয়ারম্যান মো.কাউছার, হাজারীগঞ্জ’র চেয়ারম্যান মো.সেলিম হাওলাদার,
রসুলপুর’র চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম পন্ডিত, চর ককরীমুকরি’র চেয়ারম্যান মো. আবুল হাশেস মহাজন, এওয়াজপুর’র চেয়ারম্যান মো. মাহাবুব আলম খোকন, জাহানপুর’র চেয়ারম্যান নাজিম হাওলাদার, অধ্যক্ষ নজরুল নগর’র চেয়ারম্যান
মো. রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিব নগর’র চেয়ারম্যান মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়া, আবু বকরপুর’র চেয়ারম্যান মো. সিরাজ জমাদ্দার, আবদুল্লাপুর’র চেয়ারম্যান মো. আল এমরান প্রিন্স, ঢালচর’র চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম হাওলাদার। তারা হামলা, মামলার ভয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যালয় ছাড়ার ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও কার্যালয়ে আসেনি। এসকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ, শুধু সচিব ও ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা অফিস রয়েছেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সনদের আবেদন করেও চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর না থাকায় প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন না। এতে করে জরুরি দাপ্তরিক কাজে ব্যাহত হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২১ টি ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান আতগোপনে থেকে ১৪-১৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাক্ষর করে জনসাধারণকে সেবা দিলেও ওদিন দুপুরের পর আবুবকরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদারকে জনতা আটক করে জুতার মালা পড়িয়ে রাস্তায় ঘোরালে অন্যান্য চেয়ারম্যানরা সন্মানের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এসকল চেয়ারম্যানরা দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা অপকর্ম করেছে। এখন জনরোষে পড়ার ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি, জনগণের সেবা নিশ্চিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায় চেয়ারম্যান মো. সেলিম হাওলাদার কার্যালয়ে নেই। তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ। শুধু সচিব অফিস করছেন। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। এ সময় নাগরিক সনদ নিতে আসা ইউনিয়নের বাসিন্দা নূরউদ্দিন, ও সালমা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগের লেবাসধারী চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গাঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয় ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। নিজেদের প্রয়োজনে কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। অন্যান্য ইউনিয়নেও একই অবস্থা। দায়িত্ব পালনের ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা কেন দিচ্ছে না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন এলাকাবাসী।
নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখন বলেন, গত ০৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে যখন আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন থেকে কার্যালয়ে ফিরেছি। এবং সেবা প্রত্যাশীদের সেবা দিচ্ছি।
চরমানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, দলমত নির্বিশেষে আমার এলাকার জনগণ কঠিন এক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাই আমি সব সময় জনগণকে সেবা দিতে প্রস্তুত থাকি।
এখন থেকে নিয়মিত পরিষদে অফিস করবেন বলে এমনটাই জানিয়েছেন তারা দুজন। এ জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা উপজেলার ১৯ জন ইউপি চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ সালেক মুহীদ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।