আজ মায়ের দ্বাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬-এর ২৫ ডিসেম্বর সবার মায়া ত্যাগ করে তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানের কাছে মা পরম আরাধ্য। আমার জীবনেও মা প্রিয় মানুষ, শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
মায়ের ¯েœহ-আদর আর মমতায় বড় হয়েছি। মায়ের ¯েœহরাজি আজও অন্তরে প্রবহমান। মায়ের ¯েœহভরা পবিত্র মুখখানি যখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মনে হয় এখনই মায়ের কাছে ছুটে যাই।
জন্মলগ্ন থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মা যতœ করে আমায় গড়ে তুলেছেন। মা ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতাম না। শৈশব আর কৈশোরের সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। প্রতিবার নির্বাচনী জনসংযোগে যাওয়ার প্রাক্কালে কাছে টেনে পরম আদরে কপালে চুমু খেয়ে আমার সার্বিক সাফল্য কামনায় প্রাণভরে দোয়া করতেন মা। আজ নির্বাচনের সময় মায়ের অভাব হৃদয় দিয়ে অনুভব করি, মনে করি, মাতৃত্বভরা মমতাময়ী মায়ের সেসব কোমল স্মৃতি।
আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭০-এর ২৫ এপ্রিল। সেদিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল জনসভা ছিল চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। বাবার মৃত্যুসংবাদ আমার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে আমাদের প্রিয় নেতা এম এ আজিজকে জানিয়েছিলেন, ‘তোফায়েলের বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন। ’ মিরসরাইয়ের জনসভায় এম এ আজিজ ভাইসহ যখন সভা করছি, তখন আমার বক্তৃতা শেষে আজিজ ভাই বললেন, আমি যেন অনতিবিলম্বে ভোলা চলে যাই
বিশাল সেই জনসভায় লাখো লোক জমায়েত হয়েছিল। বক্তৃতা শেষে প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান বাবু সাহেবের ভাইয়ের, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন- গাড়িতে করে চাঁদপুর এবং ২৬ তারিখ সকালবেলা গ্রামের বাড়ি পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবার দাফন হয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ’৭০-এর ১৭ এপ্রিল। আমার বাবার নাম আজহার আলী, মা ফাতেমা খানম। আমি দাদা-দাদি, নানা-নানিকে দেখিনি। মা ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা-মায়ের সুখের সংসার। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে আমার অবস্থান পঞ্চম। বিদ্যালয় জীবনের সূচনায় নিজ বাড়িতে থেকে গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুল কোড়ালিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। এরপর বাড়িতে থেকেই খায়েরহাট জুনিয়র হাইস্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করে বোরহানউদ্দিন হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। প্রাইমারি এবং জুনিয়র স্কুলের প্রতি পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করতাম। আজকাল গ্রামে উপজেলায় অনেক হাইস্কুল হয়েছে। তখনকার দিনে এত হাইস্কুল ছিল না। আমাদের এলাকা বোরহানউদ্দিনে একটি মাত্র হাইস্কুল ছিল, সেখানে ভর্তি হই। বোরহানউদ্দিন হাইস্কুলে আমাকে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। বাড়ি থেকে সাত মাইল দূরে অবস্থিত স্কুলে কর্দমাক্ত পথে খালি পায়ে হেঁটে যেতে হতো। সেকালে আমাদের গ্রাম অনুন্নত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত। পাকা সড়ক, সেতু, কালভার্ট, বিদ্যুৎ এসব কিছুই নেই। স্কুলে তখন কোনো হোস্টেল ছিল না। সেই ছোট্টকালেই যখন আমার বয়স মাত্র ১৩, তখন আত্মীয়-স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। কষ্ট হলেও মা আমাকে আদর করে লেখাপড়ায় নিয়মিত উৎসাহ জোগাতেন। সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারের পর যখন অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি সে সময় সংবাদ পাই, ভোলা সরকারি হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে চারটি আসন খালি আছে। সর্বমোট শখানেক ছাত্র ভর্তি প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। মাত্র চারটি শূন্য আসনের বিপরীতে শতজন! ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখি তীব্র সেই ভর্তি প্রতিযোগিতায় আমার স্থান প্রথম। এভাবেই ১৯৫৭-র জানুয়ারি মাসে ভোলা সরকারি স্কুলে ভর্তি হই এবং স্কুল হোস্টেলে থাকতে শুরু করি। শুরু হয় হোস্টেলে থেকে লেখাপড়ার পালা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মোট ১৪টি বছর আমি হোস্টেলে ছিলাম। মা আমাকে আদর করে ‘মনু’ বলে ডাকতেন। সবসময় বলতেন, ‘মনু, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো। ’ মায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। তার ফল পেয়েছি পরীক্ষায় ভালো করে। বার্ষিক পরীক্ষায় হয় প্রথম, নয় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। মাকে ছেড়ে জীবনের প্রথম হোস্টেল জীবন। মন পড়ে থাকত মায়ের কাছে। অপেক্ষায় থাকতাম কখন মায়ের কাছে যাব। প্রতি সপ্তাহে ছুটির আগের দিন মায়ের কাছে চলে যেতাম। তখনকার ভোলায় বিদ্যুৎ ছিল না। বৈদ্যুতিক বাতি, পাখা এসব কিছুই ছিল না। হারিকেনের স্বল্প আলোয় লেখাপড়ার কাজ চালিয়েছি। জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে সেসব দিনের কথা যখন স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে মনে হয় শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তবু যেন কোনো কষ্ট ছিল না। উদ্দাম-উচ্ছল-আনন্দময় জীবন ছিল। আমি দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি অপার আগ্রহ। বাবা-মায়ের আদরের ছিলাম। বিশেষ করে মা আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কখনোই কাছছাড়া করতে চাইতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা আমায় স্নেহ করতেন। পরম পূজনীয় শ্রদ্ধাভাজন সেই শিক্ষকম-লীর কথা আজও স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। সব শিক্ষকের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শিক্ষকদের অপার স্নেহ-ভালোবাসায় ধন্য আমার জীবন। দশম শ্রেণিতে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন থেকে হলাম স্কুল ক্যাপ্টেন। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক সচিব হিসেবে বরিশালে তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রেজেন্টেশন লাইনে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সব গণ্যমান্য ব্যক্তি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। হঠাৎ দেখলাম, আমার স্কুলের শিক্ষক তসীর স্যার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করবেন। তিনি তখন বরিশাল জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বললাম, বঙ্গবন্ধু, আমার স্যার। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘তুমি এখনো সালাম কর নাই!’ আমি দ্রুত তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। পরিবার, বিশেষ করে মা, শিক্ষালয় এবং বঙ্গবন্ধুর থেকে অর্জিত এসব মূল্যবোধ দিয়েই গড়ে উঠেছে আমার আচরণ কাঠামো ও জীবন। ১৯৬০-এ ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এটা ছিল বেদনাদায়ক। সেজন্য ঢাকা কলেজ ছেড়ে বরিশাল ব্রজমোহন (বি এম) কলেজে ভর্তি হই। ব্রজমোহন কলেজ থেকে সাপ্তাহিক ছুটিতে লঞ্চযোগে ভোলায় মায়ের কাছে একদিন থেকে ফিরে আসতাম। ব্রজমোহন কলেজে ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে যথাক্রমে ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, পরে হলের জি এস হিসেবে দাঁড়ালাম, তারপর হলের ভি পি, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ভি পি, ডাকসুর ভি পি, ছাত্রলীগের সভাপতি, পরে ’৭০-এর ৭ জুন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের সদস্যপদ গ্রহণ। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ভোলা-দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসনে মনোনয়ন দেন এবং মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। আমার পরম মমতাময়ী মায়ের দোয়া ও ভালোবাসায় জাতীয় রাজনীতিতে আজ আমার অধিষ্ঠান সম্ভবপর হয়েছে। মনে পড়ে ’৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের কথা। ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ পল্টন ময়দানে আমার জীবনে প্রথম জনসভা। সেদিন স্লোগান তুলেছিলাম, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করব। ’ আমরা সেই শপথ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। মা এবং মাতৃভূমি আমাদের কাছে সমার্থক। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিববাহিনীর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলতাম, ‘বঙ্গবন্ধু, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো, আমরা জানি না। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাব না। ’ সেদিনের সেই শপথও আমরা জীবন বাজি রেখে বাস্তবায়ন করে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করেছি। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে আমি ও রাজ্জাক ভাই ১৮ ডিসেম্বর এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নেতারা ২২ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করি। আর ২৮ ডিসেম্বর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত আমার পরম শ্রদ্ধেয় জননীর কোলে ফিরে যাই।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের দুই দিন পর ১৮ আগস্ট আমার বাসভবনে এসে খুনিদের অন্যতম মেজর শাহরিয়ার (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে) এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ (পলাতক) বল প্রয়োগে আমাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। পরবর্তী সময়ে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল- তিনি তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার- তাদের প্রচেষ্টায় রেডিও স্টেশন থেকে আমাকে বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। মায়ের শরীরের ওপর দিয়েই আমায় টেনে নিয়েছিল ঘাতকের দল। ’৭৫-এর পর চরম দুঃসময়। আমি তখন কারাগারে। দেশজুড়ে কারফিউ, হত্যা, গুম, গ্রেফতার আর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। অবর্ণনীয় করুণ অবস্থায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমাদের কেটেছে। আমার স্ত্রীকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়নি। তোফায়েল আহমেদের স্ত্রীকে বাড়ি ভাড়া দিলে আর্মি ধরে নিয়ে যাবে। আমার ভাগনিজামাই নজরুলের নামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচয় গোপন করে মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় সেই বাড়িতে আমার স্ত্রী থেকেছেন। তিনি এক বছর ছিলেন কলাবাগানে। সেই বাসায় কোনো ফ্যান ছিল না। পরে বরিশালের সাবেক এডিসি এম এ রবের কল্যাণে তার আজিমপুরের বাসার দোতলায় আমার পরিবারের ঠাঁই হয়। কারামুক্ত হয়ে ফিরে সেই বাসায় থেকেছি। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সময় করুণ অবস্থা গেছে আমার পরিবারের। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ২২ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ৮ হাজার আর মেয়ের নামে ৪ হাজার টাকা। জিয়াউর রহমান এগুলো ফ্রিজ করেছেন। আমরা ওই টাকা তুলতে পারতাম না। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়ার বহুরকম চেষ্টা করেছে। কোনো দুর্নীতি আবিষ্কার করতে পারেনি। কোনো মামলা দিতে পারেনি। আমার বনানীর বাড়ি, এই বাড়ির জমি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। ’৭৫-এর ৩০ জুলাই বরাদ্দ করেন আমার স্ত্রীর নামে। আমার বড় ভাই ’৭৫-এর ১১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। বড় ভাই যখন হলিফ্যামিলি হাসপাতালে, মা তখন অসুস্থ। আমাকে বলেছিলেন মাকে দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি গিয়েছিলাম। মা বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু বড় ভাই মায়ের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ পেয়ে বঙ্গবন্ধু আমার তৎকালীন সরকারি বাসভবনে এসে আমাকে আদর করে সান্ত্ব¦না দিয়েছিলেন। আমার ভাইয়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করে ভাইয়ের মৃতদেহ তিনি হেলিপ্যাডে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভোলায় প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। সে সময় যত দিন ভোলায় ছিলাম, ১২ থেকে ৩০ জুলাই, প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিতেন। তখন টেলিফোন সহজলভ্য ছিল না। থানার টেলিফোনে, নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ বেলা ১১টায় আমাকে থাকতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন ফোন করে আমার খোঁজ নিতেন। সেই স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। আমার এ পি এস ছিল শফিকুল ইসলাম মিন্টু। ১৫ আগস্টের পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য খুনিচক্রের অন্যতম ক্যাপ্টেন মাজেদের নেতৃত্বে কতিপয় সেনা সদস্য তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় মিন্টুকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। তার মৃতদেহটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমার মেজো ভাইকে গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ’৭৫-এর ৫ অক্টোবর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি তখন ময়মনসিংহ কারাগারে। তিন ছেলের দুজন মৃত একজন কারাগারে। তখন মায়ের করুণ অবস্থা। এই অসহায় অবস্থায় মা জীবন কাটিয়েছেন। আমার ঢাকার বাসায় বড় ভাইয়ের ছেলে এবং মেয়ে, মেজো ভাইয়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকে। তারা কেউ পড়ে স্কুলে কেউবা কলেজে। আমার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর একটি ছেলের জন্ম হয়। তার নাম মইনুল হোসেন বিপ্লব। শৈশব থেকে আমি তাকে পিতৃস্নেহে বড় করেছি। সে এখন আমারই ছেলে। আমাকে ‘আব্বু’ বলে সম্বোধন করে। আপন ছেলের থেকেও তাকে বেশি আদর করি। সত্যিকারই সে আদর পাওয়ার যোগ্য। আমার স্ত্রী তাকে বরিশাল ক্যাডেট কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখান থেকে সে মেধার ভিত্তিতে ম্যাট্রিকে পঞ্চম এবং ইন্টারমিডিয়েটে নবম স্থান অধিকার করে। তারপর অস্ট্রেলিয়া থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। তারই শ্বশুর আমাদের বর্তমান বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি। বিপ্লবের দুই মেয়ে। আমার পরম আদরের ‘প্রিয়ন্তী’ ও ‘শ্রাবন্তী’। আমি ওদের ‘জান’ বলে সম্বোধন করি। ওরাও আমাকে ‘জান’ বলে সম্বোধন করে। ওরা সকাল ৮টায় স্কুলে যাওয়ার আগে আমাকে চুমু দিয়ে যায়। আমার মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি সবার আদরের নাম তার ‘প্রিয়’; সে এখন নিউইয়র্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার মেয়েও তার সঙ্গে আছে। প্রতিদিন আমি তার কথা মনে করি। মা প্রিয়কে ভীষণ আদর করতেন। আমার জামাতা ডা. তৌহিদুজ্জামান, যাকে আমরা আদর করে ‘তুহিন’ বলে ডাকি- স্কয়ার হসপিটালের নামকরা ডাক্তার, কার্ডিওলজিস্ট। ১৯৯৫ সালে ওদের বিয়ে হয়। আমার মেয়ে ডা. তাসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী যখন ছোট, তখন আমার মায়ের সঙ্গে ঘুমাতো এবং মা ওকে ভীষণ আদর করতেন। এখনো মায়ের স্মৃতি আমার মেয়েটি ধরে রেখেছে। মা যখন চিকিৎসাধীন, আমার মেয়ে ও জামাতা উভয়েই আমার মায়ের যে সেবা-যতœ করেছে তা অকল্পনীয়। আমার বড় ভাইয়ের বড় ছেলে টুটুল। নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়। ওয়ারীর ক্যাপ্টেন ছিল। আবাহনীতেও খেলেছে। ২০০৪-এ আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। মায়ের সঙ্গে দেখা করে মোটরবাইকে চেপে যখন ফিরছিল, তখন একটি বেপরোয়া গাড়ি তার মোটরবাইককে চাপা দেয়। টুটুলকে তিনি এত ভালোবাসতেন যে মৃত্যু সংবাদটি শুনলে সহ্য করতে পারবেন না, এজন্য মৃত্যুসংবাদটি মাকে কখনোই জানানো হয়নি। ’৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমি ৩৩ মাস কারাগারে বন্দী ছিলাম। জেনারেল এরশাদ যখন ক্ষমতায় এলেন তখন ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে গ্রেফতার করে প্রথমে সেনানিবাসে পরে সিলেট কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সিলেট কারাগারে গিয়ে মা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেদিন ড. কামাল হোসেনের বাসভবন থেকে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুরাতন বিমানবন্দরের কাছে গাড়ি থামিয়ে চোখ বেঁধে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ’৮৪-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সাভারে স্মৃতিসৌধে গ্রেফতার করা হয়। ’৮৫-তে আমাকে গ্রেফতার করে ১৫ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে পরে কুমিল্লা কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়। ’৮৭-তে ভোলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আমি তখন সংসদ সদস্য। আমার গ্রেফতার সংবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে এলে আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল কারাগারে একটি নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। ’৯৬-এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করলে আমাকে গ্রেফতার করে রাজশাহী কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার ২০০২-এ সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমাকে গ্রেফতার করে এক রাত ক্যান্টনমেন্ট থানায় রেখে পরে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাশিমপুর কারাগারে আমাকে রাখা হয় যেখানে, সেখানে ফাঁসির আসামি কুখ্যাত এরশাদ শিকদারকে রাখা হয়েছিল। আমার পাশেই ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। পরে আমাকে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাশিমপুর থেকে যখন কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠায় তখন গোয়ালন্দ ফেরিঘাটে একটি পতাকাবাহী গাড়ি দেখি। যে গাড়িটি ছিল জামায়াত নেতা ও খালেদা জিয়া সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের। তার গাড়িতে পতাকা, আর আমার হাতে ছিল হাতকড়া। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বমোট সাতবার আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রতিটি জায়গায় আমার বৃদ্ধা মা ছেলেকে দেখার জন্য ছুটে গিয়েছেন। সে কী কষ্ট! জেলগেটে যখন মা আমার সঙ্গে দেখা করতেন সর্বক্ষণ আমার মাথাটা মায়ের বুকে থাকত। তারপর যখন তিনি আমাকে রেখে বিদায় নিতেন, তখন তার দুই চোখে অশ্রুর নদী। দুই ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে, এক ছেলে কারান্তরালে। কী নিঃস্ব রিক্ত আমার মা! সেই কঠিন দিনগুলোর কথা মনের পাতায় ভেসে ওঠে। মায়ের স্মৃতিকে আমি ধরে রাখতে চাই। বাবা-মায়ের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। জীবনে স্বপ্ন ছিল বৃদ্ধাশ্রম করার। যেখানে আমার মায়ের মতো মায়েদের সেবা-শুশ্রƒষা করতে পারব। ২০০২-এ মায়ের বয়স তখন ৮৮ বছর। অসুস্থ শরীরেও তিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে দেখতে কুষ্টিয়া কারাগারে ছুটে গিয়েছেন। মায়ের মুখখানি একনজর দেখে মনে অনাবিল শান্তি অনুভব করেছি। মা ছিলেন ধর্মপরায়ণ এমন একজন মানুষ, যিনি সর্বদাই অন্যের কল্যাণের কথা ভাবতেন। গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী যে কারও দুঃখে তিনি ছুটে যেতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন। আমাকে সবসময় বলতেন, ‘তুমি একা বড় হতে পারো না। সবাইকে সঙ্গে করেই তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। ’ মা সুখে-দুঃখে আমায় ছায়া দিতেন বটবৃক্ষের মতো। ’৯৬-এ সরকার গঠনের পর আমি তখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। বেইলি রোডে অবস্থিত বাসভবন ‘তন্ময়’-এ থাকি। মা আমার সঙ্গেই থাকতেন। প্রতিদিন মায়ের আদর নিয়ে তবেই দিনের কাজ শুরু করতাম। বনানীর যে বাসায় এখন থাকি এই বাসায় আমার শয়নকক্ষের পাশেই মায়ের ঘর। সকালে ঘুম ভাঙার পর মায়ের ¯েœহের আলিঙ্গন, আদর ছিল নিত্যদিনের পাথেয়। মাকে চুমু দিয়ে সকালে বের হতাম। আমি না ফেরা পর্যন্ত মা জানালার কাছে হাতে তসবিহ নিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকতেন কখন ফিরি। ঘরে প্রবেশ করেই মাকে চুমু দিয়ে রুমে যেতাম। সেই দিনগুলোর কথা আজও মনে পড়ে। আমার বন্ধু-বান্ধব-স্বজন প্রত্যেককেই মা অন্তর থেকে ভালোবাসতেন, আদর করতেন। মা আমার জীবনে অনুপ্রেরণার নিরন্তর উৎস হয়ে সদা বিরাজমান। মা যখন অসুস্থ তখন প্রত্যেকেই তার সেবা-শুশ্রƒষা করেছেন। পরম শ্রদ্ধাভাজন জনাব জয়নাল আবেদীন শিকদার, যাকে আমি চাচা বলে সম্বোধন করি। তিনিও আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করেন। গুলশানে তারই শিকদার হাসপাতালে মায়ের শেষজীবনের চিকিৎসাদি চলে। প্রায় দুই বছর তিনি বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর দুই দিন আগে আমি যখন নিজ হাতে মাকে খাওয়াচ্ছিলাম তখন তিনি ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় মা আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কি আমাকে মরতে দেবে না?’ আমি উত্তরে বলেছিলাম, মা আপনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমাকে দোয়া করবে কে? মা আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি আল্লাহর কাছে রেখে গেলাম। আল্লাহই তোমাকে হেফাজত করবেন। ’ এটাই ছিল মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা। মায়ের মৃত্যুদিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বনানীর বাড়িতে এসে মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর চেতনায় গড়ে উঠেছে আমার রাজনৈতিক জীবন। আর মায়ের মানবিক গুণাবলির প্রভাবে বিকশিত হয়েছে ব্যক্তিজীবন। ’৭৩-এ ভোলার বাংলাবাজারে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছি একটি গার্লস হাইস্কুল। যার নাম ‘ফাতেমা খানম গার্লস হাইস্কুল’। আজ সেখানে ৬০ বিঘা জমির ওপর মায়ের নামে ‘ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ’, ‘ফাতেমা খানম হাসপাতাল’, ‘ফাতেমা খানম এতিমখানা’, ‘ফাতেমা খানম জামে মসজিদ’, ‘ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম’সহ বিশাল এক কমপ্লেক্স। এ কমপ্লেক্সেই গরিব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসাসেবায় পিতা-মাতার নামে ‘আজহার আলী-ফাতেমা খানম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মায়ের নামে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ‘ফাতেমা খানম মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র’। এর লাগোয়া স্থানে নির্মিত হয়েছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। যা এ বছরের ১৭ জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। যেখানে সংরক্ষিত আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অবদানের স্মৃতি-নিদর্শনসমূহ। মায়ের নামে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ করার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজে এমন অনেক মা আছেন যাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত কিন্তু সন্তানদের কাছ থেকে তারা যথাযথ আদর-যত্ন পান না, সেসব বঞ্চিত বৃদ্ধা মায়ের সেবা প্রদান। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছ থেকে যে বঞ্চনা তারা পেয়েছেন আমি যেন সন্তান হিসেবে তাদের সেবা করে সেই অভাবটুকু পূরণ করতে পারি। মায়ের মমতার কোনো বিকল্প হয় না। আমার মা মমতাময়ী ছিলেন। বন্ধু-বান্ধবরা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে পরম আদর-স্নেহে তাদের কপালে হাত দিয়ে আদর করতেন মা। আর সবার মতো আমিও মনে করি আমার মা-ই শ্রেষ্ঠ। মায়ের ভালোবাসার উষ্ণতা সবসময় পেয়ে থাকি। ঘুম ভাঙার পরে যখন লাইব্রেরি কক্ষে আসি তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ছবি আর পাশে মায়ের সঙ্গে আমার ছবিটি দেখি। ছবিগুলো দেখে মনে হয়, আমি মায়ের সান্নিধ্যেই আছি। বঙ্গবন্ধু এবং মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে জীবন আমার ধন্য। পৃথিবীতে কম মানুষের ভাগ্যেই এটা জোটে! আমার প্রতি মায়ের একটি নির্দেশ ছিল, ‘বাবা, কেউ যদি তোমার কাছে হাত পাতে, কাউকে খালি হাতে ফেরত দিও না। ’ আমার নিজের অনেক গরিব আত্মীয়স্বজন আছে। যখনই ভোলা যাই আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করি। আমি মায়ের সেই নির্দেশ পালন করে চলেছি। আজ এই বনানীর বাড়িতে আছি, গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, মন্ত্রী হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর মতো বিশ্বখ্যাত নেতার সান্নিধ্য পেয়েছি। জীবনে এগুলো কল্পনাও করিনি। এমন মমতাময়ী মায়ের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত, ধন্য।
ভোলায় গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত, সেখানে কবর-ফলকে হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎকীর্ণ আছে এভাবে- ‘মা, বাবা চলে গেছেন অনেক আগে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তোমারই পাশে তুমিও চলে গেলে আমাদের
সকলকে কাঁদিয়ে, তবুও তোমরা আছো সর্বক্ষণ আমাদের হৃদয়জুড়ে। মা, প্রতি মুহূর্ত তোমাদের অভাব অনুভব করি। ’