বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টিটিএল উদ্বোধন এবং ১৩ ফায়ারফাইটারকে ‘অগ্নি বীর’ ঘোষণা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

জাতীয়

নিখাদ বার্তাকক্ষ :: বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হলো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের যান্ত্রিক বহরে। টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামের এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ বহুতল ভবনের ২৪ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে। ১৬ অক্টোবর সকাল ১১-৩০টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে নতুন এই গাড়ির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি বাংলাদেশে নতুন আসা সর্বাধিক উচ্চতার ২টি টিটিএল গাড়ির শুভ উদ্বোধন করেন। একই সাথে তিনি সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত ১৩ ফায়ারফাইটারকে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ আখতার হোসেন এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।

সকাল সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে এসে পৌঁছালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি, জি, এম ফিল তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানান। এ সময় অনুষ্ঠানের দুই বিশেষ অতিথি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এরপর স্যালুটিং ডায়াসে আরোহণ করলে মাননীয় প্রধান অতিথিকে চৌকস অগ্নিসেনাদের একটি দল সশ্রদ্ধ অভিবাদন জ্ঞাপন করে। মাননীয় প্রধান অতিথি অভিবাদন গ্রহণ করার পর ফিতা কেটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের যান্ত্রিক বহরে সদ্য যোগ হওয়া ৬৮ মিটার উচ্চতার ২টি টিটিএল গাড়ির শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ দোয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট জাতির পিতার পরিবারের শহিদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত, মানীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। একই সাথে সীতাকুণ্ডে অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী ১৩ জনসহ সকল শহিদ ফায়ারফাইটারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরপর বিশেষ অতিথিদ্বয় ও অন্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কিছু সময় টিটিএল গাড়ির পরিচালনা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

এরপর মাননীয় প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনুষ্ঠান মঞ্চে আরোহন করেন। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপবেশনের পর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সূচনা বক্তব্য এবং বিভাগীয় কার্যক্রমের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জানান, ৬৮ মিটার উচ্চতার টিটিএল গাড়িই হলো অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অধিক উচ্চতার গাড়ি। আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধাসংবলিত এই টিটিএল গাড়ি বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর বিশেষ অতিথিদ্বয় বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো মাত্র ১টি পুরনো গাড়ি ছিল, যা দিয়ে ৮-১০ তলার ওপরে কাজ করা যেতো না; বর্তমান সরকারের আমলে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবনে কাজ করার মতো ২৪টি উঁচু মইয়ের গাড়ি এনেছি। আজ ৬৮ মিটার উচ্চতার লেডার সংবলিত গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যুক্ত হওয়ায় তাদের অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা ২৪ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো। আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতেও কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক। ফায়ার স্টেশন নির্মাণের চলমান প্রকল্প শেষে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১৬ হাজার। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মানুষের জীবন নিরাপদ রাখার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় ১৩ জন ফায়ারফাইটারের শহিদ হওয়ার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি এই ১৩ ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস আজ যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী পারদর্শী বাহিনী এবং সক্ষমতার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। ভাষণ শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মাননীয় প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদ্বয়ের হাতে স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন।

আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে তিনি কর্মকর্তাদের সাথে ফটোসেশন করেন। এরপর তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। খবর : ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *