হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)’র কো-হেড অব এশিয়ান ইকোনমিক্স রিসার্চ ফ্রেডারিক নিউম্যান বলেছেন, করোনা মহামারী থেকে উদ্ভূত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশ ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সময়ের সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে ধীরে ধীরে আবার সচল হয়ে উঠছে, ঠিক তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাও ঘুরে দাঁড়াবে।
ফ্রেডারিক নিউম্যান গত মঙ্গলবার ‘ইমপ্যাক্ট অব কভিড-১৯ অন দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি অ্যান্ড সিলভার লাইনিংস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তার অভিমত ব্যক্ত করছিলেন। নিউম্যান বলেন, বাংলাদেশ সন্তোষজনক অর্থনৈতিক সহিষ্ণুতা দেখিয়ে চলেছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূলে ছিল সুদৃঢ় নিয়মানুবর্তিতা, গ্রহণযোগ্য মুদ্রাস্ফীতি ও বহির্গামী পেমেন্টের শক্তিশালী অবস্থান। বৃদ্ধি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বেড়েছে রেমিট্যান্স যা স্থানীয় চাহিদাকে সামাল দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তার অর্থনীতিকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে। একদিকে পোশাক খাতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমায় যেমন তৈরি-পোশাকশিল্পে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে, অপরদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য পড়ে যাওয়ায় এবং আমদানিতে স্থবিরতা আসায় দেশের বাণিজ্যের অবস্থান সহনশীল রয়েছে। স্থানীয় শ্রমবাজাওে দৈনন্দিন কাজের চাহিদা কমে যাওয়ায় ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ভোক্তারাও কম খরচ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চাহিদা পূরণে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে আর পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে চলেছে।
ভার্চুয়াল ভিডিও সেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বিগত দশকে অর্থনৈতিক সফলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। কভিড-১৯ প্যানডেমিক উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে কীভাবে একটি টেকসই ও বেসরকারি খাতবান্ধব প্রবৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যাবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, আমি আশা করছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় সংস্থা এইচএসবিসির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রদত্ত আজকের এ আলোচনা ও দিকনির্দেশনা বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহও উদ্যোক্তাদের এ বিশেষ পরিস্থিতি থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, এটি সবার জন্য এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। বাংলাদেশ এ পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছে এক বৃহত্তর শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানে থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত সব সহযোগিতা দিতে কাজ করে চলেছে। বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষকে সবাই সহিষ্ণু একটি জাতি হিসেবে চেনে এবং এ জটিল পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে আসব। স্বাগত বক্তব্যে এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুবউর রহমান বলেন, জনজীবনে অকল্পনীয় কিছু পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে এ কভিড-১৯ প্যানডেমিক। আর এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এটিই এ সময়ের আহ্বান। বলা হয় গভীর কালো রাতের পরও সূর্য ঠিকই উদিত হয়, আর আমি আজকের আলোচনার পর একইভাবে আশাবাদী। নিশ্চই আমরা এ পরিস্থিতি থেকে একসঙ্গেই বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নেব। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটিতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, নিয়ন্ত্রক ও সরকারি সংস্থার সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন