টাঙ্গাইলের সখীপুরে সুপ্রীমকোর্টের নিদের্শনা উপেক্ষিত : সংখ্যালঘু হিন্দুসহ ১০ পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ আজ দু’বছর।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা : যেন মগের মুল্লুকে বাস করছে সখীপুরের হাতিবান্ধা ইউনিয়নস্থ হিজলতলী গ্রামের আমেনা খাতুন গং-এর বিচারধীন মামলার সম্পত্তি হাইকোর্টের নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাদী পক্ষীয় কোন পুরুষ বাড়িতে না থাকার সুযোগে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) কয়েক শ’ লাঠিয়াল নিয়ে জোর পূর্বক অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে মর্মে গুরুতরো অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানা পুলিশের নাগের ডগায় তড়িঘড়ি করে কয়েক লাখ টাকার মাছ লুটে নিতে উক্ত জমিতে থাকা পুকুরে বেশ ক’টি সেচপাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে- এমনটাই জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এদিকে, জমিতে থাকা ফসল তুলে নিতে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে প্রস্তুতি নিলেও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে আশপাশের গ্রামবাসী এবং ভূক্তভোগী জানান, বিবাদমান সম্পত্তি নিয়ে মামলা বিচারাধীন এবং সম্প্রতি এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের এ্যাপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনা জারী হওয়া স্বত্বেও নি¤œ আদালতের রায়ের ধূঁয়ো তুলে মোটা অংকের টাকায় প্রশাসন ম্যানেজ করে লাঠিয়ালদের সাথে জমি অবৈধভাবে দখল নির্ভিগ্ন করতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সমাগম ঘটিয়েছে।
ভূক্তভোগী জানান, টাঙ্গাইল জেলার করোটিয়া, মীর্জাপুর সখীপুর, বাসাইলসহ বিভিন্ন উপজেলায় জামাত বিএনপি জোট সরকারের ২০১৪ আমলে জ¦ালাও পোড়াও আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী রূপম-মহসীন গ্রুপের প্রধান বিএনপি ক্যাডার আগুণ সন্ত্রাসী সৈয়দ রূপম আলী। তার সহযোগীরা হচ্ছে সখীপুর তক্তাচালা-কামিলার চর এলাকার নব্বেশ, মহসিন, বাদশা, সেলিম, মোতালেবহ আরো ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট।এরা এলাকায় পিজিপি’ অর্থাৎ যখন যে সরকার তখন স্বঘোষিত ভাবে লেবাস পাল্টে সেই সরকারের দলীয় লোক হয়ে যান- হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তারা বোল পাল্টে পাক্কা আওয়ামী লীগার সেজে জমি দখল, চাঁদাবাজী, মাদক ক্রয়-বিক্রয় হতে শুরু করে যাচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছেন মর্মে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রূপম প্রায়শ: দম্ভ করে বলে বেড়ায় ২০০১-২০০৬ ইং জামাত –বিএনপি জোটে ছিলাম তাতে কি। ২০০১ সালের সেই জামাত –বিএনপি জোটের টাঙ্গাইল জেলার কান্ডারী হিসেবে দলের প্রভাব খাটিয়েইতো জেলা জজকোর্ট থেকে মামলা ঠুকেছি এই জমি নিয়ে। ব্যাস আর লাগে কি। সেই ১৯৭৫ সালের দায়েরকৃত মামলায় আমাদের পরাজয়কে “ছু-মন্তর ছুঁ” দারুণ এক ভেল্কীতে আমূল বদলে দিলাম। টাকায় সব হয়। আর তাইতো জেলা জজ টাঙ্গাইল ২০০১ ইং একতরফা রায় ঘোষা করলেন। কীভাবে এটা করেছি তা না বলাই ভালো। দেয়ালেরও কান আছে। এখন আমরা পাক্কা আওয়ামী লীগার। আমরা আগে যে আওয়ামী লীগার ছিলাম না তা এখন কেউ কি বলতে পারবে? আমাদের দাপটে আসল আওয়ামীলীগাররাই পর্যন্ত কোনঠাশা। টাকা দিয়ে প্রশাসন কিনে নিয়েছি। থানা-পুলিশ তো পরের কথা উপর মহলের অনেকেই এখন আমাদের টাকার কাছে বাধাঁ। এই পর্যন্ত সখীপুর থানায় এক মিনিটের জন্য আমাকে আটকে রাখতে পেরেছে? যে কোন মূল্যে হাতিয়ে ঐ জমি দখল আমরা করবোই। সামনে নির্বাচন সবাই ব্যস্ত এই ফাঁকে সব সেরে নিলাম। বাস্তবায়িত হলো অনেক দিনের স্বপ্ন। সেই রূপম গ্রুপ বহুমূল্যে পরিণত হওয়া জমিটা শেষ পর্যন্ত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দখল করে নিল- এমন মন্তব্যই করেছে একাধিক সূত্র।
প্রশ্ন উঠেছে এলাকায় সন্ত্রাসী এবং ভূমিখেকো হিসেবে কুখ্যাত রূপম গং স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় শক্তি ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দলটির ইমেজ ধ্বংস করে আওয়ামীলীগের নাম ব্যবহার করে এতো বড় একটা বেআইনী কাজের লাইসেন্স তারা কোথায় পেলো? থানা-পুলিশের সামনে বীরদর্পে বিবাদমান মামলাধীন জমিটি মধ্যযুগীয় কায়দায় দখল করে নেয়ার রহস্য কি? তারা কি আইনের উর্দ্ধে?
উল্লেখ করা যেতে পারে বছর খানেক আগে ২৮ জানুয়ারী ২০১৬ ইং এ এনেক্স-৩৪ নং কোর্টেও বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক আপীলটি ডিসচার্জ করে দেন। কারণ আপীলকারী আমেনা বেগম গংদের এতদিনের আইনজীবী ভ্রম্যনাথ চক্রবর্তী সেদিন চলমান মামলাটির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন নি। কারণ তিনি তার কয়েক মাস আগে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি হয়ে যান। আমেনা গংদের সংশ্লিষ্ট আইনজীবি ভ্রম্যনাথ চক্রবর্তী হাইকোর্টেও চিারপতি হলেও বিধি বিধানের ধোঁয়াচ্ছন্নতা রেখে আপীলকারীদের হাইকোর্ট কর্তৃক কোন প্রকার নোটিশাদি দেয়া কিংবা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের ঘটনা হয়নি বলে আক্ষেপ করেন প্রতিক্রিয়া জানান ভূক্তভোগী আপীলকারী আমেনা বেগমের সঙ্গীয় স্বজন ও এলাকাবাসী।
তারা আরো জানান উক্ত আপীলকারী সুদীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে অর্থাৎ ১৯৬৪ সাল থেকে হালনাগাদ উক্ত জমির খাজনাসহ অন্যান্য রাজস্ব প্রদান করে আসছেন। অবৈধভাবে দখল করে নিয়ে কয়েক লাখ টাকার মাছ আর ফসল কেটে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর ভূমিখেকোরা জমি দখল করতে না পারলেও মামলার নামে হয়রানি করে বেশ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার নকশাঁ করলেও এখন সম্পত্তি দখলের পর তাদের থাবা আরো বাড়িয়েছে। দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে বিবাদী পক্ষকে। ফলে খুব শিঘ্রই খুনের মতো ঘটনা ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে ভূক্তভোগীদের মাঝে।
একেতো সম্পত্তি বেহাত তার উপর প্রাণনাশের শংকায় রীতিমতো বিহ্বল ভূক্তভোগী এবং এলাকাবাসী সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে থানা-পুলিশের সামনে সম্পত্তি গ্রাসের মতো ধৃষ্টতাকে আমলে নিয়ে পুরো বিষয়টি তদন্ত পূর্বক সম্পত্তির পূর্বাবস্থা বজায় রাখতে সং্িশ্লষ্ট আইন প্রয়োগ সংস্থা কর্তৃক দূর্বৃত্ত ভূমিখেকো বিএনপি-জামাতের এজেন্ট আগুন সন্ত্রাসীদের আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে।