বড় জাহাজ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের প্রচলিত পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। এখনকার লাইটারেজ জাহাজ পদ্ধতির পরিবর্তে পাইপলাইনে খালাস করা হবে। ফলে বাঁচবে খরচ ও সময়। এজন্য ‘ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটিসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এগুলো বাস্তবায়নে ২ হাজার ৭৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৪৪০ কোটি ৭৯ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সোমবার এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। একনেকের বাকি সদস্যরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
সূত্র জানায়, ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এ সময় প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে এক হাজার চার কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তায়নের লক্ষ্য ছিল। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আড়াই বছর বাড়ানো হল। অন্যদিকে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে অর্থায়নে সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।
প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রচলিত লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমদানি করা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড অয়েল পাইপলাইনের মাধ্যমে সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে খালাস নিশ্চিত করা যাবে। এ লক্ষ্যেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলাধীন ৩টি প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং আত্রাই নদীর ড্রেজিংসহ তীর সংরক্ষণ, ব্যয় হবে ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং/খনন, ব্যয় ৩২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দফতরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ব্যয় ৮৮৫ কোটি টাকা। রূপগঞ্জ জলসিড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জামালপুর ও শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ৫০৫ কোটি টাকা। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, ব্যয় ১০৭ কোটি টাকা এবং এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৮৭ কোটি টাকা।