গ্যাসের দুই চুলা ১০৮০ টাকা এক চুলা ৯৯০ টাকা নির্ধারণ

ঢাকা

নিখাদ বার্তাকক্ষ: গ্রাহক পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বর্তমান দর ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রাকৃতিক গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার সংক্রান্ত এই আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এই গ্যাসের দাম ১ জুন থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ চলতি মাসের শেষেই গ্রাহকদের এই বাড়তি বিল দিতে হবে। নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। অন্যদের মধ্য অংশ নেন কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান।
সার উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ২৫৯ শতাংশ, বৃহৎ শিল্পে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বাড়ানো হয়নি সিএনজির দাম।
লিখিত বক্তব্যে আবু ফারুক বলেন, কমিশন আইনের ৩৪ এর ৬ ধারা অনুযায়ী পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানি গত জানুয়ারি প্রথম দিকে আবেদন করেন। গত ২১ থেকে ২৪ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই শুনানিতে বিইআরসি কারিগরি কমিটি সবধরনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করে। কমিশন আইনের ধারা ২২ (খ) এবং ধারা ৩৪ অনুযায়ী গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এইখাতে ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঘাটতি হবে। এই টাকার মধ্যে সরকার ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বাজেটে দেবে। অন্যদিকে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
আবাসিকের প্রি-পেইড মিটারের জুন মাসে রিচার্জ করা হবে কীভাবে জানতে চাইলে মকবুল ই ইলাহি বলেন, গ্রাহকদের দ্রুত রিচার্জ করে আপডেট করে নিতে হবে। আর মিটারবিহীনরা জুনের শেষে এই আদেশ অনুযায়ী বিল দেবেন।
বিইআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পুননির্ধারণের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন প্রস্তাবনা আসে। ২১-২৪ মার্চ শুনানি গ্রহণ করা হয়। ৭ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি-পরবর্তী লিখিত মন্তব্য নেওয়া হয়। শুনানি পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুতের ট্যারিফ ৪ দশমিক ৪৫ থেকে ৫ দশমিক ০২ পয়সা হলে বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে বাড়বে। এটা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ হবে। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। তবে সরকারের নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে কমিশন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। এফবিসিসিআই ও বিকেএমইএ দাম বাড়ানোর পক্ষে আছে। তবে এটা যেন এক্সপোর্টের ওপর প্রভাব না ফেলে। আমরা সরকারের সঙ্গে নানাবিধ পর্যালোচনা করে ভোক্তার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে ট্যারিফ দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা, সার উৎপাদনে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম কমেছে। এ খাতে আগে গ্যাসের দাম ছিল ১৭ টাকা শূন্য ৪ পয়সা, এখন করা হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। বাণিজ্যিক (হোটেল রেস্টুরেন্টে) ২৩ টাকা থেকে ২৬ টাকা ৬৪ টাকা করা হয়েছে। চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা করা হয়েছে। সিএনজির গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে, যে কারণে স্পট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেয় গণশুনানিতে।
এর আগে ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন পাইকারি দাম ঘনমিটারপ্রতি ১২ দশমিক ৬০ টাকা করা হয়। ভর্তুকি দিয়ে ৯ দশমিক ৭০ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি। আজকের নতুন ঘোষণায় গড় মূল্য ১৬ দশমিক ৩০ টাকা করা হয়েছে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া : বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বৈশ্বিক সরবরাহে অস্থিরতার মধ্যেও দেশে গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠনটির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর মতো ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ক্ষতির আশঙ্কা করছে। জীবনযাত্রার মান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতির ভীড়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারেনি সাধারণ নাগরিকেরা। এই দরবৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার খরচ আরও এক ধাপ বেড়ে গেল বলে মনে করেন তারা। বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *