স্থায়ী বরখাস্ত হলেন রাবির দুই শিক্ষক,একজনের পদোন্নতি স্থগিত

রাজশাহী

নিখাদ বার্তাকক্ষ: জাল সনদ দিয়ে ছুটি কাটানো ও ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশ যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এক শিক্ষকের পদোন্নতি চার বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রবিবার (২৯ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের কনফারেন্স রুমে ৫১৪তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাল সনদ দিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ছাড়পত্র না নিয়ে বিদেশে অবস্থানের অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জেসমিনকেও স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর চার বছরের জন্য পদন্নোতি স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫১২ ও ৫১৩তম সভায় ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৫১৪তম সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাদের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তদন্ত কমিটি ও প্ল্যানিং দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর আগেও জাল সনদ দিয়ে ছুটি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সালমা সুলতানার বিরুদ্ধে। ছুটি বাড়াতে দফায় দফায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। প্রথমে শিক্ষা ছুটি নিলেও ছুটি বাড়াতে মাতৃত্বকালীন জাল সনদ ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও তথ্য গোপনেরও অভিযোগ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডেকেট সভায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম কবিরকে আহ্বায়ক করে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. রেজিনা লজ ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। তবে নিয়মানুযায়ী রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের স্ব স্ব নামে কেন তাদের বরখাস্ত এবং অপসারণ করা হবে না মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পত্র দেওয়া হয়। অভিযুক্ত তিনজন নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সেই পত্রের জবাব দেন। কিন্তু তদন্ত কমিটির কাছে তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ড. সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছিল। আমরা তাদেরকে তদন্তে সহযোগিতা করেছি এবং তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করেছে। সেখানে সত্যতা পাওয়ায় ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর পদোন্নতি স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও মানসিকভাবে উত্ত্যক্তের ঘটনায় বিষ্ণু কুমার অধিকারীর ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া লিখিতভাবে তাকে সতর্ক করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গত বছর তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি । মাতৃত্বকালীন সনদ জালিয়াতিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ড. সালমার বিরুদ্ধে। আর বিধিবহির্ভূতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও অনুমতি না নিয়েই ছুটিতে থাকা এবং ছাড়পত্র না নিয়ে বিদেশে অবস্থানের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা উম্মে হাবিবা জেসমিনকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *