গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করেছে, তারা আমাদের গণতন্ত্র শেখাচ্ছে: শেখ সেলিম

প্রচ্ছদ

নিখাদ বার্তাকক্ষ : আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করেছে তারা এসে আমাদের গণতন্ত্র শেখাচ্ছে ! এদেশে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে সে হলো জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কখনও গণতান্ত্রিক দল হতে পারে না, যাদের নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী; তাদের উত্তরসূরীরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার নির্বাচিত হবে। ১৯৭০ সালে নির্বাচন থেকে ন্যাপ সরে গিয়েছিল। বিএনপির অবস্থা ন্যাপের মতোই হবে; আর আওয়ামী লীগ ২০৪০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে।
সোমবার (৩০ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের দি কিং অব চিটাগাং-এ চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে জিয়াউর রহমান। জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট। তার বাবা-মার কবর পাকিস্তানে। বেঁচে থাকলে তার ফাঁসি হতো। মৃত মানুষকে আসামি করা যায় না, এটা দেশের আইনে আছে। সে বেঁচে গেছে।
তিনি বলেন, ৭৫’ সালে মোস্তাক-জিয়া একটি নির্বাচিত সরকারকে ষড়যন্ত্র করে উৎখাত করে। জিয়াউর রহমান একজন কালপ্রিট। সে বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তার হত্যার বিচার না হওয়ার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ২২ হাজার ৫০০ যুদ্ধাপরাধী জেলে ছিলো তাদের ছেড়ে দিয়েছে। তারা ও তাদের দল বিএনপি এখন বলে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা। তাদের মুখে এসব মানায় না।
বাংলাদেশের অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এশিয়ার মধ্যে অর্থনীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ কখনও শ্রীলঙ্কা হবে না। দ্রব্যের দাম শুধু বাংলাদেশে বাড়েনি, সব দেশেই বেড়েছে। আমেরিকায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
শেখ সেলিম বলেন, যারা বলে এদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তারা এদেশের ভালো চায় না। আমাদের দেশ আমেরিকা, কানাডা, পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের পতন ঘটাতে অনেক পরিকল্পনা চলছে। সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। তারা যত আমাদের টানবে আমরা তার ৪০ কদম এগিয়ে যাব।
বঙ্গবন্ধু কন্যা মচকে যাবে, কিন্তু ভেঙে যাবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এই সরকার যুদ্ধপরাধীর বিচার করেছে। একজন যুদ্ধপরাধী থাকলেও তার বিচার হবে। আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি ২শতাংশ বাড়াবে। মানুষের উন্নয়ন হবে। চট্টগ্রামে-কক্সবাজার রেললাইন, ফ্লাইওভার, টানেলসহ ১৫টি মেগাপ্রকল্প এই আমলেই হচ্ছে।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনিকে স্মরণ করে তিনি বলেন, মনি ভাইয়ের আদর্শকে নিয়ে যুবলীগ তার কার্যক্রম এগিয়ে নেবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যুবলীগ পূরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলো শেখ ফজলুল হক মনি। মনিকে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি করে সারা বাংলাদেশের ছাত্রলীগকে উজ্জীবিত করা হয়েছিল।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি নয়। চাইলেই ফেলে দেওয়া যাবে না। রাজপথে সংগ্রাম করে জনতার ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি অনেক চক্রান্ত করেছে। স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চিঠি পাঠিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদেরকে আদর্শিক চর্চা করতে হবে। আদর্শিক চর্চা করতে হলে ব্যক্তি বিশেষের স্লোগান বর্জন করতে হবে। ব্যক্তি বিশেষ দিয়ে রাজনীতি হবে না। আগামী নির্বাচনে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অপরাজনীতির শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে যুবলীগকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়ার ইতিহাস যাদের কাছে, তাদের নিয়ে যুবলীগের কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে উদ্বোধক ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল লতিফ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম, সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ।
সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এর আগে জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পয়ারা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহ নেতাকর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেন। পদ প্রত্যাশী নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *