চীনের উইঘুরে মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য ফাঁস

অপরাধ আন্তর্জাতিক

নিখাদ বার্তাকক্ষ: চীনের উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ শিনকিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কিছু ছবি ও তথ্য ফাঁস হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের শিনকিয়াং সফরের সময় ছবিগুলো হ্যাক হয়েছিল। ছবিগুলোতে চীন সরকারের ‘কারাবন্দি কর্মসূচির’ চিত্র প্রকাশ্যে আসে। এই ছবিগুলো হাতে পেয়েছে বিবিসি। এতে তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ শিবিরসহ উইঘুরদের গণআটকের প্রমাণ আবারও স্পষ্ট হলো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাক করা ফাইলগুলোতে পুলিশের তোলা পাঁচ হাজারের বেশি উইঘুরের ছবি আছে। তাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বন্দি সশস্ত্র রক্ষীর কড়া পাহারায় আছেন। উইঘুরদের বেশির ভাগই মুসলিম। চীনের উত্তর-পশ্চিমের শিনকিয়াং অঞ্চলে অন্তত এক কোটি উইঘুর সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।

আত্মপরিচয়ের বেলায় তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে মধ্য এশিয়ার লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন। তাদের ভাষা তুর্কির কাছাকাছি। গত কয়েক দশকে চীনের সংখ্যাগুরু হান জাতি সেই অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এতে উইঘুর সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

তিব্বতের মতো শিনকিয়াং কাগজে কলমে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হলেও, বেইজিং-এর বাইরেও তারা নিজেদের মতো করে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই এলাকা চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। চীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ আছে। যদিও এসব প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করে না বেইজিং।

তথ্যগুলো প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে। আলাপে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ছবিগুলোতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আটক দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের বয়স ১৫ বছর; সবচেয়ে বয়স্ক নারী ৭৩ বছর বয়সী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকজনকে মুসলিম হওয়ার কারণে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সফরের কারণে আটক করা হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি ছবি ও তথ্য হাতে পেয়েছে বিবিসি। সেই সঙ্গে চীনের শীর্ষ নেতাদের ‘বিশেষ বক্তব্য’, পুলিশের ব্যক্তিগত তথ্য এবং তাদের প্রতি নির্দেশনামূলক ডকুমেন্ট রয়েছে।

বিবিসি আরও জানিয়েছে, ঊশিনকিয়াংয়ের পুলিশের সার্ভার থেকে ২০১৮ সাল থেকে সংরক্ষণ করা ফাইলগুলো হ্যাক হয়েছিল। এগুলো চীন সরকারের বরখাস্ত কর্মকর্তা অ্যাড্রিয়ান জেনজের তত্ত্বাবধানে ছিল। পুলিশের প্রতি নির্দেশনায় বলা আছে, আটক ব্যক্তিদের কেউ হাতকড়া বা শিকলসহ পালানোর চেষ্টা করলে সরাসরি ‘গুলি করে হত্যা’ করতে পারবে রক্ষীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *