শিল্পকারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হবে: সালমান এফ রহমান

জাতীয় প্রচ্ছদ

নিউজ ডেস্ক :: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে গঠিত উচ্চ পর‌্যায়ের জাতীয় কমিটির সভাপতি সালমান ফজলুর রহমান এমপি বলেছেন, শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হবে। জাতীয় কমিটির সুপারিশ না মানলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, দেশের সব শিল্প কারখানার অগ্নি-নির্বাপণ, ভবনের কাঠামো ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয়ে সরকার আলাদা একটি এজেন্সি করার কথা ভাবছে সরকার। এজন্য যদি বিদ্যমান আইনের সংশোধন করতে হয়, প্রয়োজনে তাও করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার দফতরে আজ শুক্রবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় গঠিত জাতীয় কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতেই এবং এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. জসিম উদ্দিন, বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন ওই সংবাদ সম্মেলনে।

সালমান এফ রহমান বলেন, কমপ্লায়েন্সে দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট দেয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের কারখানাগুলোর শ্রম পরিস্থিতি, আইনগত বিষয়সহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন দেবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুডসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস একটি সম্পাদকীয় ছেপেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কল-কারখানা শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নি-দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সালমান ফজলুর রহমান এমপিকে সভাপতি করে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করেছে সরকার। পাশাপাশি সরকার ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নেতৃত্বে অধিবেশনে সকল শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন, বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের বিষয়ে একটি অনুশাসন জারি করেছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন), গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিসিআই) সভাপতি এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বা বিজিএমইএ’র সভাপতিকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সব শিল্প-কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ সব পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানার অবকাঠামোগত, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে। প্রজ্ঞাপনে কলকারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে গঠিত কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে—কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও কমিটির সরেজমিন পরিদর্শনে পাওয়া পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এ ছাড়া কমিটি কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনানুগ কর্তৃপক্ষসমূহের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ, কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর বিষয়ে প্রায়োগিক আইন, বিধি, নীতিমালা, গাইডলাইন ও নির্দেশনা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিটি সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, নীতিমালা, গাইডলাইন ও নির্দেশনা পালনের বিষয়টি পরিবীক্ষণ, কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাব-কমিটি গঠন করতে পারবে এবং এ সব সাব-কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালার আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই কমিটিতে প্রয়োজনে যেকোনো (সংখ্যক) সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা যাবে এবং কমিটি সরকারের বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *