গণমাধ্যম সঠিকভাবে কাজ না করলে বহুমাত্রিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

জাতীয় প্রচ্ছদ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গণমাধ্যম সঠিকভাবে কাজ না করলে বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক-বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি, এই সমাজের দর্পণ হচ্ছে গণমাধ্যম, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সুতরাং গণমাধ্যম যখন সঠিকভাবে কাজ না করে তখন বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

মন্ত্রী শুক্রবার দুপুরে কাপ্তাই উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলার সাংবাদিকদের জন্য ‘সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিগারুল ইসলাম জিগারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মামুন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো: শাহজাহান সিকদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রবীর খিয়াং প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি অনেকের কাছে একটি ব্রত। বহু সাংবাদিক আছেন যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করলে সচিব হয়ে অবসরে যেতে পারতেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো ছেলেরা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে এই পেশায় আসেন।
সাংবাদিকতার নামে দুয়েকজন অপসাংবাদিকের ব্যক্তিগত দুর্নাম যাতে সামগ্রিক সাংবাদিক সমাজকে কলংকিত করতে না পেরে সেদিকে নজর রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই, শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নয়। বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে গত ১০০ বছরে ইউরোপের দেশগুলো অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু সেখানে মানবিকতা হারিয়ে গেছে। অনেক ক্ষত্রে সেখানে মূল্যবোধ নেই। সেখানে পারিবারিক মূল্যবোধ, বন্ধন হারিয়ে গেছে। ইউরোপের সমাজে শতকরা ৩০-৫০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমরা সেই সমাজ চাই না। আমরা চাই এমন একটি সমাজ যেখানে বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র উন্নত হবে, একটি উন্নত সমাজও হবে। যেখানে মানবিকতা, মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ ও মমত্ববোধ থাকবে।’

সাংবাদিকদের যোগ্যতা নির্ধারণের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নানা প্রোগ্রামে যাই তখন অনেকে বলেন সাংবাদিকতায় প্রবেশের জন্য একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন। তবে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে এর বিপক্ষে। কারণ, পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে, যাদের কোনো ডিগ্রি ছিল না, কিন্তু তারা অনেক জ্ঞানী। কবিগুরু, কাজী নজরুল ইসলাম মেট্রিক পাস করেন নাই। বিলগেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনবার ফেল করে আউট হয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের জ্ঞান পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। তাদের জ্ঞান নিয়ে গবেষণা হয়, পিএইচডি ডিগ্রি হয়।’

ড. হাছান বলেন, ‘এছাড়াও সারাদেশের সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে একটি স্ট্রেটেজি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যাতে যে কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকে যেতে না পারে। একটা অনলাইন খুলেই অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সাংবাদিকতা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’

সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ও সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমরা যাতে উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি, সেটির ব্যাপারেও লিখতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একইসাথে যে কথা বলতে পারে না, যার ভাষা হারিয়ে গেছে তার জন্যও লিখতে হবে।’

আলোচনাসভা শেষে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটির উপজেলার ৩৪ জন সাংবাদিককে প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট প্রদান করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।
সূত্র : বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *