অর্থনীতি বাংলাদেশ রাজনীতি

প্রস্তাবিত বাজেট বর্তমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত দলিল : ওবায়দুল কাদের

 

বাসস: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত দলিল।

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রস্তাব ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত হয়েছে। বাজেট করোনার বর্তমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত দলিল। জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল।’

ওবায়দুল কাদের আজ শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা বলেন।

২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংসদ ভবনের নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে করোনার কবল থেকে ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের’ এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট হচ্ছে এবারের বাজেট। এটি একটি জনবান্ধব ও জীবন ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। যার মাধ্যমে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহ পাবে।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এডিবি’র সাময়িকীর হিসাবে আশঙ্কা করা হয়েছে- করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৪ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও বাজেটের আকার কমেনি, বরং বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রীসহ বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দুর্যোগে-দুর্বিপাকে এ দেশের মাটি ও মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছে আওয়ামী লীগ।এই দলটির নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও আমাদের বাজেটের আকার কমেনি বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট।

ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকে এটাকে উচ্ছাভিলাষী মনে করতে পারেন। তবে, আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। এই প্রত্যাশা পূরণে যত ঝুঁকি নিতে হয় শেখ হাসিনা তা নিবেন।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কাক্সিক্ষত ভিত রচনাই এবারের বাজেটের লক্ষ্য। করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে। ফলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত অর্থবছরে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা হ্রাস করে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম বছর। সুতরাং এই বাজেটে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব পাবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্ছ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মানীবাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যে কোন জরুরী চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটে কৃষিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসনে জোর প্রদান, সারের উপর ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন কর্মদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী অর্থবছরে কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিতে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী অর্থবছরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতে গত অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ও লকডাউন জনিত কারণে সৃষ্ট দরিদ্র্য কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করে এই খাতকে তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের এই সময়ে কর্ম ঝুঁকিতে পড়া দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে ৫০ লক্ষ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার আওতা সম্প্রসারণসহ নতুন করে উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা এই বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ১১ লক্ষ ৫ হাজার জন নতুন উপকার ভোগী সংযুক্ত হবে এবং এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *