শেখ আবু নেহাল: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আতঙ্কে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতারা। ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে দলকে পুঁজি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে যারা কোটিপতি হয়েছেন, সরকারি কাজ যথাযথভাবে না করে নিম্নমানের কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা সবাই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিযানের জালে ধরা পড়েন তা নিয়ে টেনসন বেড়েই চলেছে তাদের। এছাড়া আওয়ামী লীগের যেসব প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়া সরকারি কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে, নিম্নমানের কাজের কারণে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছে না, সেই সব প্রভাবশালী নেতারাও টেনসনে রয়েছেন কখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কারণ নামে বেনামে বেশিরভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। নেতাদের অনুরোধে সেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পায়, নেতারা কমিশনও পান কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তাদের উপর আসে না। তবে দুর্নীতির ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে শেখ হাসিনা। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর, অডিট বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে সকল কাজের হিসেব নিকেষ করা হচ্ছে। যারা অতীতে ফাঁকি দিয়েছেন, নিম্নমানের কাজ করেছেন তারাও ছাড় পাবেন না। সূত্র জানায়, হাইব্রিড, ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিবাজ অনুপ্রবেশকারীদের পাশাপাশি ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের এক সময়ের ত্যাগী নেতারা সরকারি বিভিন্ন দফতরের টেন্ডারের কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এখনও এক সময়ের ত্যাগী নেতারাই বিভিন্ন সরকারি দফতরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু বেশিরভাগ নেতাই সরকারি কাজে দুর্নীতি করেছেন এবং করছেন। দুর্নীতিবাজ আমলাদের সাথে নিয়ে ত্যাগী নেতারাও এখন দুর্নীতিবাজে পরিণত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই বিশ্বাস করে কাজ দিচ্ছেন সেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন।
এ নিয়ে প্রত্যেক দফতরের মন্ত্রীরাই বেশ বিরক্ত। দুইজন মন্ত্রীর ভাষ্য, দলের জন্য ত্যাগ করেছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এমন পরিচয় দিয়ে সরকারি কাজ নেবার চেষ্টা করেন অনেকে। তাদের জন্য আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারাও তদবির করেন। কিন্তু কাজ দেবার পর দেখা যায় এসব ত্যাগী নেতারাও দুর্নীতিতে কম যান না। কিন্তু বক্তৃতা করার সময় সব দোষ অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড নেতাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন সেই ত্যাগী নেতারা।
গত বছর থেকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ঠিকাদার মাফিয়া জিকে শামীম, কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, নরসিংদীর যুবমহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া , যুব মহিলা লীগ নেত্রী শারমিন জাহান, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, রিজেন্ট গ্রুপের সাহেদ করিমসহ সকলেই দলের প্রভাবশালী ছিলেন। কেউ ছিলেন অনুপ্রবেশকালী, কেউ দলের ত্যাগী। কিন্তু। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় একটা সময়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন সবাই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল সাম্রাজ্য।
অপকর্মের প্রশ্রয় দেয়ার কারণে গত বছর পদ হারিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। দুর্নীতির কারণে পদ গেছে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর।
কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যারা সরকারি কাজে দুর্নীতি করছেন এবং তাদের ছত্রছায়া দানকারী নেতাদের নামসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, আরেক দিকে বিভিন্ন নেতাদের তদবিরে সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টের বেহাল দশা। এ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও দিয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রী। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার, তাদের প্রশ্রয় দেয়া নেতা, বিভিন্ন দফতরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা নেতা ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের তালিকা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জমা দেয়া হবে।
জানা যায়, দেশের বড় একটি ঠিকাদার কোম্পানি যারা বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় কাজ করতো সেই কোম্পানিটি এখন আওয়ামী লীগের দুইজন কেন্দ্রীয় নেতার ছত্রছায়ায় ব্যবসা করছে। সারা দেশেই দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করছে অনেকে। আর সমান তালে চলছে দুর্নীতি।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী দাপুটে নেতারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি কাজের দুর্নীতির বিচার বিশ্লেষণ হলে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিডদের সঙ্গে ত্যাগী নেতারাও ফেঁসে যাবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কৃষ্টিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক নিখাদ খবরকে বলেন, দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকেছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে দুর্নীতি করেছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন যা দুঃখজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে খুবই কঠোর তিনি দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেবেন না।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক অভিজাত্যপূর্ণ জীবন যাপন করেন। অনেকেই দুর্নীতির সাথে জড়িয়েছেন, দেশের বাইরে বিত্তবৈভব গড়েছেন। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করেন। দুর্নীতির ছিটে ফোটাও তার আশে পাশে পড়তে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে চলেছেন।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী নিখাদ খবরকে বলেন, বিভিন্ন সময় দেখা গেছে তিনি যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, অপকর্ম করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে কতক্ষণ কাজ করা সম্ভব? যখন দলের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতারাও দুর্নীতি-অপকর্মের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানে এখন অনেক প্রভাবশালীরাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেন না।