মহাজাতকের বছরে আয় শত কোটি, দানের রক্ত বেচে লাভ সাড়ে ৮ কোটি

অপরাধ

মো: মাজহারুল পারভেজ>>

মহাজাতক শহীদ আল বোখারী ২০২৩ সালে শুধু এক বছরেই আয় করেছেন শত কোটি টাকা। মানুষের দান করা রক্ত বিক্রি করে লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই গত ২৪ বছরে তিনি কম করে হলেও ২ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার সহযোগীরা। পুবালী, এইচএসবিসি ও ডাচবাংলাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একাউন্টে ছাড়াও তার বাসা-বাড়িতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা।

কোয়ান্টামের নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০২৩ সালে যাকাত সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। সংগ্রহের পরিমাণ ১৮ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার ১৯৯ টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় ২ কেটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ৪৪৭ টাকা বেশি আয় হয়েছে। অনলাইনে দান বেড়েছে ১৩.৪৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে দানের পরিমাণ ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৮ হাজার ২৭৫ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৮২৬ টাকা বেশি।

কোয়ান্টাম ডোনেশন অ্যাপে জমা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। বিকাশ অ্যাপে ৭ কোটি ৬১ লাখ। নগদ অ্যাপে ২১ কোটি ৮১ লাখ । রকেট অ্যাপে ৮ কোটি ৬৫ লাখ। জান-ই সাদকা ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ২১৭ টাকা। বিশেষ দান ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার ১১৯ টাকা। মাটির ব্যাংক ২৫ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৩ টাকা । হিলিং-এ জমা পড়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫২ টাকা। দানের রক্ত বিক্রি থেকে লাভ হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। এসব খাত থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন গত ২০২৩ সালে মোট আয় করেছে ৮৯ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪১ টাকা। এ ছাড়াও দেশের বাইরে ৪৭টি দেশ থেকে অনুদান পাওয়া গেছে আরও কয়েক কোটি টাকা । সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে কোয়ান্টামে আয়ের পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

দানের রক্ত বিক্রি করে বছরে লাভ সাড়ে ৮ কোটি টাকা
কোয়ান্টামের রক্ত কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০০ সালে তারা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ২৪ বছর ধরে কেয়ান্টাম রক্ত সংগ্রহ করছে। কোয়ান্টামের রক্তদান গাইড ঘেঁটে জানা গেছে, তাদের ডোনারপুলে ৫ লক্ষাধিক সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধলক্ষাধিক সদস্য নিয়মিত রক্ত দান করেন। ২৪ বছরের পথ পরিক্রমায় এ পর্যন্ত (৩১ মে ২০২৪) কোয়ান্টাম সরবরাহ করেছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯১ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। আর সংগ্রহ করেছে মোট ১০ লাখ ২ হাজার ৮২৫ ইউনিট রক্ত। এর মধ্যে ক্যাম্প থেকে সংগৃহীত হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫৪ ইউনিট। বাকি ৭ লাখ ১২ হাজার ৮৭১ ইউনিট রক্ত ডোনাররা সরাসরি ল্যাবে এসে দিয়ে গেছেন। তবে অনলাইনে (https://blood.quantummethod.org.bd/bn/list/static_content/our_activities) দানের রক্ত থেকে আয় ব্যয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

কোয়ান্টাম ল্যাবের ইনচার্জ শামীমা নাছরীন মুন্নি দৈনিক নিখাদ খবরকে বলেন, ১ ব্যাগ রক্ত প্রসেসিং করে ৪টি সেল বের করা যায়। দানের রক্ত আমরা বিক্রি করি না। গত দুই যুগের সেবায় তারা কোনো রকম প্রসেসিং খরচ ছাড়া দেড় লক্ষাধিক রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। সহস্রাধিক শিশুকে বিশেষ কার্ড করে দেওয়া হয়েছে, যাতে নিয়মিত রক্ত পেতে তাদের কোনো অসুবিধা না হয়।

তবে কোয়ান্টাম ল্যাবের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত লেজার ঘেঁটে জানা গেছে, বর্তমানে প্রসেসিং ফি বাবদ ২৫০ টাকার কম খরচ হলেও কোয়ান্টাম প্রতি ব্যাগ রক্ত ১৫৫০ টাকা ধরে বিক্রি করে। অথচ তারা অনলাইন ও অফলাইনে প্রচার করে, বাংলাদেশে শুধু কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনেরই রক্তের প্লাজমা আর ব্লাড সেল আলাদা করার যন্ত্র আছে। এ কারণে যাদের যেটা দরকার সেটাই দেয়া যায়। এতে করে রক্ত কম নষ্ট হয়। আসলে তারা এসব বলে রক্ত সংগ্রহ করে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগেও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
শুধু রক্ত বিক্রি করে ২০০৩ সালে ল্যাব থেকে তাদের আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৯২০ টাকা। কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানসহ বিভিন্নভাবে ব্যয় দেখিয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। নিট লাভ হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। তাদের অভ্যন্তরীন হিসাব নিরীক্ষা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কোয়ান্টাম ব্লাড ল্যাবের এক যুগেরও বেশি সময়ের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতিষ্ঠানটি শুধু দানের রক্ত বিক্রি করে ২০১৬ সালে লাভ করেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এসব টাকা কোথায় যায়, তা কেবল মহাজাতকই জানেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো স্বচ্ছতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে তিনি চলে এসেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *