রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ

প্রচ্ছদ

নিখাদ বার্তাকক্ষ: রাশিয়ার কাছ থেকে কোন উপায়ে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনা যায়, সেব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কষ্টে আছে। এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত এবং অন্যান্য রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি তেল কিনছে-তাহলে আমরা কিনতে পারি কিনা সেটা দেখতে হবে। এর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি একথা বলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. এম শামসুল আলম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার নিকট থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেছেন। রাশিয়া বলছে তারা কারেন্সি সোয়াপে যাবে। আমাদের হয়ত রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটা পদ্ধতি বের করতে হবে।
রাশিয়ার নিজস্ব মুদ্রা হলো রুবল। সেদেশের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থাপনায় গেলে রুবল এবং টাকার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে।
এম এ মান্নান জানান, রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা গ্রণযোগ্য নয়। কেন এটা হলো তা ক্ষতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, একনেক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব উত্তরার দুর্ঘনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন এই ঘটনার সঙ্গে যারা এবং যে কোম্পানি জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসাথে তিনি যেসব কোম্পানি প্রকল্পের কাজে অবহেলা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেবে সেসব কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনৈতিক মন্দার আভাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী কোন দেশ এর বাইরে নয়। চলমান যুদ্ধ কোথায় যাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী ব্যয় করার ক্ষেত্রে আবারও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যয় আমরা সাবধানে করব। কল্যাণমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাব কিন্তু এই মুহূর্ত যেটা খুব জরুরি নয়, সেটা পরে করা যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাতে ইতিবাচক কাজ হচ্ছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডালারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক। গতবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স ১০ শতাংশ বেশি এসেছে। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় ভাল। এসকল বিবেচনায় আমরা মনে করি-‘খাদে আমরা পড়ব না বরং আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াব।’
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধীরে ধীরে কমছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে বলা হয়েছে দেশে এর দাম সমন্বয় করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন থেকে এখন বিপুলসংখ্যক জাহাজ খাদ্য নিয়ে রওনা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে দাম কমছে। এসব বিবেচনায় মনে করি, যে ভয় ছিল সেটা কেটে যাবে। ৬ মাসে আগে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম সেখানে আবার ফিরে যাব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এম এ মান্নান বলেন, বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে অনেক রাষ্ট্র নিজেদের মুদ্রা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে যাচ্ছে। আমাদেরও সেদিকে যেতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ অন্যান্য উপায় বের করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *