করোনা সংকটেও রপ্তানি বেড়েছে ১৬ পণ্যে

অর্থনীতি

ওষুধ পাট জুতা সবজি জাহাজে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
করোনা সংকটে যখন বিশ্ব অর্থনীতি খাবি খাচ্ছে, তখন সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর শেষে দেখা যাচ্ছে- অন্তত ১৬টি পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। লকডাউন, কারখানা বন্ধ এমন কি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো নেতিবাচক সিদ্ধান্তগুলোও এসব খাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মহামারীতেও যে ১৬ পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে সক্ষমতা দেখিয়েছে সেগুলো হলো- ওষুধ, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্য, ফলমূল, কাঁচা পাট, শাকসবজি, জুতা (চামড়া ব্যতীত), জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন, গলফ সাফট, তামাক, চা, কার্পেট, ফার্নিচার, হ্যান্ডিক্রাফটস, জাহাজ এবং অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং দ্রব্যাদি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে জাহাজ রপ্তানিতে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া ফলমূল ৪৮ শতাংশ, কাঁচা পাট ১৫ শতাংশ, শাকসবজি ৬৫ শতাংশ, চা ১১ শতাংশ, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ ২৬ শতাংশ এবং ওষুধ রপ্তানিতে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বরে চীনে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পরপরই আমরা ইউরোপ, আমেরিকা ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিরোধী ওষুধ ও ওষুধ সামগ্রী এবং সম্ভাবনাময় পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। রপ্তানি খাতে গতিবিধির ওপর নজর রাখতে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, যেটি এখনো অব্যাহত। সংকট নিরসনে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। নতুন ও সম্ভাবনাময় পণ্যে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নিয়মিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অপ্রচলিত পণ্য ও নতুন বাজার সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে। ফলে করোনা সংকটেও দেশের বেশ কিছু পণ্য ইতিবাচক রপ্তানি আয় ধরে রাখতে পেরেছে। জুনে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ : মে মাসের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে রপ্তানি আয় প্রায় দ্বিগুণ এবং এপ্রিলের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে দেশের রপ্তানি আয় স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী ওই মাসে আয় কমে ৫২০ ডলারে নেমে যায়, যা আগের বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম। এরপর গত মে মাসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে রপ্তানি আয় অর্জিত হয় ১ হাজার ৪৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সেখানে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত মার্চে আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতারা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও দেশগুলোর ক্রেতাদের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারই সুফল মিলেছে জুনের রপ্তানি আয়ে। ক্রেতারা স্থগিত করা পণ্যগুলো আবার নিচ্ছে। করোনায় ক্ষতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা : নানা উদ্যোগের পরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয় ৩৩ হাজার ৬৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে গেছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬ হাজার ৮৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকৃত রপ্তানি আয় ছিল ৪০ হাজার ৫৩৫ মিলিয়ন ডলার। এর ওপর ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পণ্য খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ৪৫ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে যাওয়ায় সেই লক্ষ্য দূরের কথা আগের অর্থবছরের প্রকৃত আয়ের চেয়েও রপ্তানি কমে গেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে যে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে এটি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কম। হিসাব করে দেখা গেছে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৫৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। অর্থাৎ করোনা মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *