নিখাদ বার্তাকক্ষ: ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিজেপির দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। বিক্ষোভ সহিংসতার জেরে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় ১৫ই জুন পর্যন্ত সব ধরণের জমায়েত ও অবরোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া। সড়ক, রেল অবরোধের পাশাপাশি ঘটেছে আগুনের ঘটনাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি বুধবার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। সহিংসতা বন্ধে রাজ্যের অনেক এলাকায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশও। শুক্রবার মুসল্লিদের বিক্ষোভ দমনে টিয়ারগ্যাস ও লাঠি চার্জ করে পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আটক হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। বিক্ষোভদমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে কাশ্মীরে। বন্ধ রাখা হয়েছে দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সহিংসতা এড়াতে সেখানেও বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ।
এছাড়া দিল্লি, মধ্য প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, বিহার, মহারাষ্ট্রসহ দেশজুড়েই বিক্ষোভ করেছেন মুসল্লিরা। একই ইস্যুতে ভারত ছাড়াও শুক্রবার বাংলাদেশ, ইরান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে উত্তর প্রদেশের ছয় জেলা থেকে আটক করা হয়েছে দুইশ ২৭জনকে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির রাঁচি শহরে বিক্ষোভ পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছে দুইজন।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছে আরও ১০ জন। এছাড়াও দিল্লি, মধ্য প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, বিহার, মহারাষ্ট্রসহ দেশজুড়েই বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। একই ইস্যুতে ভারত ছাড়াও এদিন ইরান, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার ডেইলি মার্কেটের কাছে রাঁচির মূল সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান হাজার হাজার মুসল্লি। এসময় তাদের উপর পুলিশ গুলি চালায়, এতে অন্তত দুজন নিহত ও ১০ জনের বেশি গুরুতর আহত হয়েছেন।
রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর হাসপাতালে আনা দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষোভকারীদের অনেকেই পুলিশের উপর পাথর ছুড়তে থাকেন। শুরু হয় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ। পরে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে সিনিয়র পুলিশ সুপার সুরেন্দ্র কুমার ঝা গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, রাঁচি মূল সড়ক ও ডেইলি মার্কেট এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নুপুর শর্মার নামে মামলা করেছে দেশটির পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দিল্লি পুলিশ এ মামলা দায়ের করে।
মামলায় তার বিরুদ্ধে সমাজের শান্তি বিনষ্ট, অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়। বিজেপির এই নেতা ছাড়াও আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
এনডিটিভি বলছে, বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা, একজন সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কয়েকজন ব্যবহারকারী এবং ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— বিজেপির দিল্লির গণমাধ্যম শাখার বহিষ্কার হওয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল, পিস পার্টির প্রধান মুখপাত্র শাদব চৌহান, হিন্দু মহাসভার পদধারী নেতা শাকুন পাণ্ডে, রাজস্থানের মাওলানা মুফতি নাদিম, আব্দুর রেহমান, অনীল কুমার মীনা, গুলজার আনসারি, সাংবাদিক সাবা নাকভি ও হিন্দু মহাসভার নেতা শাকুন পাণ্ডে।